Tuesday, November 24, 2020

পাঠ ৩- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়

 শব্দরূপ(Declension)

(১) ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত শব্দের প্রথমা ও দ্বিতীয়ার দ্বিবচনে শেষ অক্ষর সর্বদা দীর্ঘ হবে, অর্থাৎ ই-কার ঈ-কার হবে এবং উ-কার ঊ-কার হবে, যথা-মুনী, পতী, সাধূ, মতী, ধেনূ, বারিণী, মধুনী ইত্যাদি।

(২) অ-কারান্ত ভিন্ন স্বরান্ত ক্লীবলিঙ্গ শব্দগুলির প্রথমা ও দ্বিতীয়া বিভক্তির দ্বিবচনে ও বহুবচনে যে সকল পদ হয়, তাদের  দ্বিবচনে শেষ দুটি বর্ণের স্বরসংযোগ 'হ্রস্ব দীর্ঘ' এবং বহুবচনে শেষ দুটি বর্ণের স্বরসংযোগ  'দীর্ঘ হ্রস্ব' হয়। উদাহরণ যথা- বারিণী(দ্বিবচন), বারীণি(বহুবচন); মধুনী(দ্বিবচন), মধূনি(বহুবচন) ইত্যাদি। 

(৩) দ্বিতীয়ার বহুবচনে যে পদ হয় তার শেষে যদি 'ন্' থাকে, তাহলে ঐ 'ন্'-এর পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হবে, যথা- নর-নরান্, মুনি-মুনীন্, পতি-পতীন্, সখি-সখীন্, সাধু-সাধূন্ প্রভৃতি।

(৪) অস্মদ্ ও যুষ্মদ্-শব্দের -মা, নৌ, নঃ, মে, ত্বা, বাম্, বঃ, তে-এই সংক্ষিপ্ত বিকল্প রূপগুলি-
(ক) বাক্যের বা শ্লোকের চরণের আরম্ভে প্রযুক্ত হয় না, যথা- বাক্যের আরম্ভে- 'তব লেখনীং গৃহাণ', 'আবাং সা কথয়তি' প্রভৃতি। শ্লোকের চরণের আরম্ভে-
 ত্বাং স রক্ষতি যত্নেন মাং স দ্বেষ্টি নিরন্তরম্।
তবাত্র ন দোষঃ কশ্চিন্ মম দোষোঽস্তি কশ্চন।।
(খ)  চ, বা, হা, অহ, এব -এই পাঁচটি অব্যয় শব্দের যোগে এই বিকল্পপদগুলির প্রয়োগ হয় না, যথা-শিক্ষকঃ ত্বাং মাং চ উপদিশতি। পুস্তকং মম এব ইত্যাদি। কিন্তু 'চ' প্রভৃতির সঙ্গে সাক্ষাৎ যোগ না থাকলে হয়, যথা-'হরঃ হরিশ্চ মে প্রভুঃ'।
(গ) অচাক্ষুষ জ্ঞানার্থক ধাতুর যোগে এই সব আদেশ হয় না। যথা-মনসা ত্বাং ধ্যায়তি। অচাক্ষুষ জ্ঞানার্থক ধাতুর সঙ্গে পরম্পরা সম্বন্ধ থাকলেও হয় না, যথা-ভক্তঃ তব রূপং স্মরতি। চাক্ষুষ জ্ঞানে হয়, যথা- চক্ষুষা ভক্তঃ ত্বা পশ্যতি । 
(ঘ) বাক্যের প্রথমে সম্বোধন পদ থাকলে, ঐ সম্বোধন পদের পরেই অস্মদ্ ও যুষ্মদ্-শব্দের বিকল্পপদগুলির প্রয়োগ হয় না, যথা-অগ্নে তব ভক্তং রক্ষ।
(ঙ) অস্মদ্ ও যুষ্মদ্-শব্দের পঞ্চমীর একবচনের ও বহুবচনের পদসমূহ(ত্বৎ, যুষ্মৎ, মৎ এবং অস্মৎ) সংস্কৃতে প্রযুক্ত হয় না। সাধারণতঃ এদের উত্তর তসিল্(তস্) প্রত্যয় যোগ করে প্রয়োগ করতে হয়। যথা-ত্বত্তঃ(তোমার কাছ থেকে), যুষ্মত্তঃ(তোমাদের কাছ থেকে), মত্তঃ(আমার কাছ থেকে), অস্মত্তঃ(আমাদের কাছ থেকে)।

(৫) অবী(ঋতুমতী), তন্ত্রী(বীণাগুণ), তরী(নৌকা), লক্ষ্মী(বিষ্ণুপত্নী/শোভা/কান্তি/সম্পত্তি), হ্রী(লজ্জা), ধী(বুদ্ধি) এবং শ্রী(শোভা)-শব্দের প্রথমা ও সম্বোধনের একবচনে সুবিভক্তির লোপ হয় না এবং হ্রস্ব হয় না, যথা- লক্ষ্মীঃ(প্রথমার একবচন), হে লক্ষ্মীঃ(সম্বোধনের একবচন)। এরূপ অবী, তন্ত্রী, তরী, হ্রী, ধী এবং শ্রী।

-অবী-তন্ত্রী-তরী-লক্ষ্মী-হ্রী-ধী-শ্রীণামুণাদিতঃ।
স্ত্রীলিঙ্গে বর্তমানানাং ন সুলোপঃ কদাচন।।

(৬) অম্বার্থনদ্যোর্হ্রস্বঃ- সম্বোধনের একবচনে অম্বার্থক শব্দ এবং নদীসংজ্ঞক শব্দের শেষ অক্ষর হ্রস্ব হয়, যথা-অম্বার্থক শব্দ-হে অম্ব (জগদম্বা-শব্দের রূপ অম্বা-শব্দের ন্যায়, কিন্তু কোনো নারীর বা দেবতার নাম হলে এর রূপ লতা শব্দের ন্যায় হয়, যথা-হে জগদম্বে), হে অল্প প্রভৃতি। নদীসংজ্ঞক শব্দ- হে নদি, হে বধু।

(৭) প্রথম, চরম, তয়প্-প্রত্যয়ান্ত(দ্বয়, ত্রয়, দ্বিতয়, ত্রিতয়, চতুষ্টয় প্রভৃতি), অল্প, অর্ধ, কতিপয় এবং নেম(Half, Part)-শব্দের প্রথমার বহুবচনে(জস্-বিভক্তি-তে) বিকল্পে সর্বনাম  শব্দের ন্যায় রূপ হয়, যথা- প্রথমে, প্রথমাঃ; চরমে, চরমাঃ; দ্বিতয়ে, দ্বিতয়াঃ; অল্পে, অল্পাঃ; নেমে, নেমাঃ ইত্যাদি।

(৮) 'উভ'  এবং 'উভয়'-শব্দের অর্থ এক হলেও উভ-শব্দ কেবল দ্বিবচনে-ই প্রযুক্ত হয়, একবচন ও বহুবচনে নয়, উদাহরণ যথা- এতৌ উভৌ ছাত্রৌ।  উভয়-শব্দ আবার একবচনবহুবচনে-ই ব্যবহৃত হয়, উভয়-শব্দের দ্বিবচন নেই, উদাহরণ যথা- এতদ্ উভয়ং চিন্তয়।  উভয়ে দেবাসুরাঃ সমুদ্রং মমন্থুঃ।

(৯) নিকটবর্তী বস্তু বোঝালে ইদম্-শব্দ, নিকটতর বস্তু(খুব কাছে) বোঝালে এতদ্-শব্দ, দূরবর্তী বস্তু বোঝালে অদস্-শব্দ এবং দৃষ্টির বহির্ভূত বস্তু বোঝালে তদ্-শব্দ প্রযুক্ত হয়। যথাক্রমে উদাহরণ- অয়ম্ অশ্বঃ(This is a horse), এষ মার্জারঃ(This is a cat), অসৌ অশ্বঃ(That is a horse), গচ্ছতি(He goes/He is going)।
ইদমস্তু সন্নিকৃষ্টং সমীপতরবর্তি চৈতদো রূপম্।
অদসস্তু বিপ্রকৃষ্টং তদিতি পরোক্ষে বিজানীয়াৎ।।

অঙ্কবাচক সংখ্যা(Cardinal Numerals)

(১) এক-শব্দ একবচনান্ত, দ্বি-শব্দ দ্বিবচনান্ত, ত্রিচতুর্-শব্দ বহুবচনান্ত। এদের তিনলিঙ্গে তিন প্রকার রূপ হয়, যথা- একঃ সূর্যঃ, একা নারী এবং একং মিত্রম্।  কিন্তু 'কেউ কেউ'(Some) বোঝাতে একশব্দ বহুবচনান্ত, যথা-একে বদন্তি (কেউ কেউ বলেন-Some say)।

(২) পঞ্চন্(৫) থেকে অষ্টাদশন্(১৮) পর্যন্ত ১৪-টি শব্দ সর্বদা বহুবচনান্ত এবং তিন লিঙ্গে এদের রূপ সমান হয়, যথা-'পঞ্চ ছাত্রাঃ', 'ষণ্ণাং পুস্তকানাম্' ইত্যাদি।

(৩) ঊনবিংশতি(১৯) থেকে নবনবতি(৯৯) পর্যন্ত শব্দসমূহ একবচনান্ত। এদের মধ্যে ত-কারান্ত (ত্রিংশৎ, চত্বারিংশৎ, পঞ্চাশৎ, পঞ্চপঞ্চাশৎ প্রভৃতি শব্দ নিত্য পুংলিঙ্গ বা অজহল্লিঙ্গ) শব্দের রূপ ভূভৃৎ-শব্দের ন্যায় এবং ই-কারান্ত(বিংশতিঃ, ষষ্টিঃ, সপ্ততিঃ, অশীতিঃ প্রভৃতি শব্দ নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ বা অজহল্লিঙ্গ) শব্দের রূপ মতি-শব্দের ন্যায় হয়। যথা- পঞ্চাশতা ছাত্রৈঃ (পঞ্চাশ জন ছাত্রের দ্বারা), বিংশতিঃ ছাত্রাঃ(কুড়ি জন ছাত্র)।

(৪) শত, সহস্র, অযুত, লক্ষ ও নিযুত-শব্দ নিত্য ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত। এদের রূপ ফল-শব্দের ন্যায়। যথা-শতং অশ্বাঃ, সহস্রং বালকাঃ।

(৫) কোটি-শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ ও একবচনান্ত। রূপ মতি-শব্দের ন্যায়। যথা- কোটিঃ পুস্তকানি।

(৬) অনেক শব্দ সর্বদা-ই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়, যথা-অনেকে বিহগাঃ(অনেকগুলি পাখি)।

(৭) এক হতে অষ্টাদশন্ পর্যন্ত ১৮টি শব্দ কেবলমাত্র বিশেষণভাবেই ব্যবহৃত হয়। এরা বিশেষ্য ভাবে কখনও ব্যবহৃত হতে পারে না।  বিশেষণ বলে বিশেষ্য-অনুযায়ী এদের লিঙ্গ, বিভক্তি, বচন হয়। যথা-'একঃ শিশুঃ', 'একং ফলম্', 'চতস্রঃ বালিকাঃ', 'অষ্টাদশ বৃক্ষাঃ' ইত্যাদি।

(৮) ঊনবিংশতি থেকে যাবতীয় সংখ্যাবাচক শব্দ বিশেষণ ও বিশেষ্য উভয়ভাবেই ব্যবহৃত হয়। যে ভাবেই ব্যবহৃত হোক না কেন, এরা সর্বদা একবচনান্ত হয়ে থাকে, কিন্তু এদের বিশেষ্য বহুবচনান্ত হয়।  বিশেষণরূপে ব্যবহার, যথা- ঊনবিংশতিঃ বৃক্ষাঃ, শতং পুষ্পাণি ফলানি বা।
বিশেষ্যরূপে ব্যবহার, যথা- 'ছাত্রাণাং বিংশতিঃ', 'পুস্তকানাং সহস্রম্' ইত্যাদি (বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় এরা যাদের সংখ্যা বোঝায় সেই বিশেষ্যের শেষে ষষ্ঠী বিভক্তি হয় )।

(৯) সংখ্যার আবৃত্তি(Repetition) বোঝাতে(অর্থাৎ দুই কুড়ি, তিন শত, শত শত, সহস্র সহস্র ইত্যাদি) বিংশতি প্রভৃতি বিশেষ্য শব্দের দ্বিবচন ও বহুবচন হয়। যথা- 'ফলানাং দ্বে বিংশতী', 'বৃক্ষাণাং ত্রীণি শতানি', 'গৃহাণাং সহস্রেষু' ইত্যাদি।
বিশেষণ বিংশতি প্রভৃতির দ্বিবচন ও বহুবচন হতে পারে না। অতএব, 'দ্বে বিংশতী ফলানি'-এরূপ প্রয়োগ অশুদ্ধ (ভুল)

পূরণবাচক সংখ্যা(Ordinal Numerals)

(১) ঊনবিংশতি, বিংশতি, একবিংশতি প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দের উত্তর ডট্ বা তমট্ প্রত্যয় যোগ করে পূরণবাচক সংখ্যা করা হয়। যথা- একবিংশতি+ডট্=একবিংশঃ, একবিংশতি+তমট্=একবিংশতিতমঃ। এরূপ ঊনবিংশঃ বা ঊনবিংশতিতমঃ, দ্বাত্রিংশঃ বা দ্বাত্রিংশত্তমঃ প্রভৃতি।

(২) একাদশ প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দের উত্তর পূরণ অর্থে ডট্ হয়, যথা- একাদশঃ, ত্রয়োদশঃ ইত্যাদি।

(৩) অন্যান্য পূরণবাচক শব্দগুলি হল- প্রথমঃ, দ্বিতীয়ঃ, তৃতীয়ঃ, চতুর্থঃ, পঞ্চমঃ, ষষ্ঠঃ, সপ্তমঃ, অষ্টমঃ, নবমঃ, দশমঃ, বিংশঃ বা বিংশতিতমঃ, ত্রিংশঃ বা ত্রিংশত্তমঃ, ষষ্টিতমঃ, সপ্ততিতমঃ, অশীতিতমঃ, নবতিতমঃ, শততমঃ, সহস্রতমঃ ইত্যাদি। 

(৪) পূরণবাচক শব্দগুলি বিশেষণ ও একবচনান্ত হয়। এদের রূপ পুংলিঙ্গে নর-শব্দের ন্যায়, ক্লীবলিঙ্গে ফল-শব্দের ন্যায় এবং স্ত্রীলিঙ্গে নদী-শব্দের ন্যায় হয়। কেবল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়-শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে আকারান্ত এবং এদের রূপ লতা শব্দের ন্যায় হয়।

সংখ্যাবাচক ক্রিয়াবিশেষণ(Numeral Adverbs)

(১) সকৃৎ(একবার), দ্বিঃ(দুইবার),  এরূপ- ত্রিঃ, চতুঃ, পঞ্চকৃত্বঃ, ষট্কৃত্বঃ, সপ্তকৃত্বঃ, অষ্টকৃত্বঃ প্রভৃতি।

(২) একধা(এক প্রকারে, ভাবে, দিকে), এরূপ- দ্বিধা, ত্রিধা, চতুর্ধা, পঞ্চধা, ষড়্ধা বা ষোঢ়া, সপ্তধা ইত্যাদি।

(৩) একশঃ(একে একে বা এক এক করিয়া), এরূপ- দ্বিশঃ, ত্রিশঃ, শতশঃ প্রভৃতি।

মনে রাখতে হবে যে, এই উদাহরণগুলি অব্যয়।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-
Helps to the Study of Sanskrit-জানকীনাথ শাস্ত্রী।
পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র-সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য



প্রশ্নপত্র(Question Paper): https://forms.gle/rzbpSjV98GsbkDbh9



No comments:

Post a Comment