শব্দরূপ(Declension)
(১) ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত শব্দের প্রথমা ও দ্বিতীয়ার দ্বিবচনে শেষ অক্ষর সর্বদা দীর্ঘ হবে, অর্থাৎ ই-কার ঈ-কার হবে এবং উ-কার ঊ-কার হবে, যথা-মুনী, পতী, সাধূ, মতী, ধেনূ, বারিণী, মধুনী ইত্যাদি।
(২) অ-কারান্ত ভিন্ন স্বরান্ত ক্লীবলিঙ্গ শব্দগুলির প্রথমা ও দ্বিতীয়া বিভক্তির দ্বিবচনে ও বহুবচনে যে সকল পদ হয়, তাদের দ্বিবচনে শেষ দুটি বর্ণের স্বরসংযোগ 'হ্রস্ব দীর্ঘ' এবং বহুবচনে শেষ দুটি বর্ণের স্বরসংযোগ 'দীর্ঘ হ্রস্ব' হয়। উদাহরণ যথা- বারিণী(দ্বিবচন), বারীণি(বহুবচন); মধুনী(দ্বিবচন), মধূনি(বহুবচন) ইত্যাদি।
(৩) দ্বিতীয়ার বহুবচনে যে পদ হয় তার শেষে যদি 'ন্' থাকে, তাহলে ঐ 'ন্'-এর পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হবে, যথা- নর-নরান্, মুনি-মুনীন্, পতি-পতীন্, সখি-সখীন্, সাধু-সাধূন্ প্রভৃতি।
(ক) বাক্যের বা শ্লোকের চরণের আরম্ভে প্রযুক্ত হয় না, যথা- বাক্যের আরম্ভে- 'তব লেখনীং গৃহাণ', 'আবাং সা কথয়তি' প্রভৃতি। শ্লোকের চরণের আরম্ভে-
(৫) অবী(ঋতুমতী), তন্ত্রী(বীণাগুণ), তরী(নৌকা), লক্ষ্মী(বিষ্ণুপত্নী/শোভা/কান্তি/সম্পত্তি), হ্রী(লজ্জা), ধী(বুদ্ধি) এবং শ্রী(শোভা)-শব্দের প্রথমা ও সম্বোধনের একবচনে সুবিভক্তির লোপ হয় না এবং হ্রস্ব হয় না, যথা- লক্ষ্মীঃ(প্রথমার একবচন), হে লক্ষ্মীঃ(সম্বোধনের একবচন)। এরূপ অবী, তন্ত্রী, তরী, হ্রী, ধী এবং শ্রী।
স্ত্রীলিঙ্গে বর্তমানানাং ন সুলোপঃ কদাচন।।
(৬) অম্বার্থনদ্যোর্হ্রস্বঃ- সম্বোধনের একবচনে অম্বার্থক শব্দ এবং নদীসংজ্ঞক শব্দের শেষ অক্ষর হ্রস্ব হয়, যথা-অম্বার্থক শব্দ-হে অম্ব (জগদম্বা-শব্দের রূপ অম্বা-শব্দের ন্যায়, কিন্তু কোনো নারীর বা দেবতার নাম হলে এর রূপ লতা শব্দের ন্যায় হয়, যথা-হে জগদম্বে), হে অল্প প্রভৃতি। নদীসংজ্ঞক শব্দ- হে নদি, হে বধু।
(৭) প্রথম, চরম, তয়প্-প্রত্যয়ান্ত(দ্বয়, ত্রয়, দ্বিতয়, ত্রিতয়, চতুষ্টয় প্রভৃতি), অল্প, অর্ধ, কতিপয় এবং নেম(Half, Part)-শব্দের প্রথমার বহুবচনে(জস্-বিভক্তি-তে) বিকল্পে সর্বনাম শব্দের ন্যায় রূপ হয়, যথা- প্রথমে, প্রথমাঃ; চরমে, চরমাঃ; দ্বিতয়ে, দ্বিতয়াঃ; অল্পে, অল্পাঃ; নেমে, নেমাঃ ইত্যাদি।
(৮) 'উভ' এবং 'উভয়'-শব্দের অর্থ এক হলেও উভ-শব্দ কেবল দ্বিবচনে-ই প্রযুক্ত হয়, একবচন ও বহুবচনে নয়, উদাহরণ যথা- এতৌ উভৌ ছাত্রৌ। উভয়-শব্দ আবার একবচন ও বহুবচনে-ই ব্যবহৃত হয়, উভয়-শব্দের দ্বিবচন নেই, উদাহরণ যথা- এতদ্ উভয়ং চিন্তয়। উভয়ে দেবাসুরাঃ সমুদ্রং মমন্থুঃ।
(১) এক-শব্দ একবচনান্ত, দ্বি-শব্দ দ্বিবচনান্ত, ত্রি ও চতুর্-শব্দ বহুবচনান্ত। এদের তিনলিঙ্গে তিন প্রকার রূপ হয়, যথা- একঃ সূর্যঃ, একা নারী এবং একং মিত্রম্। কিন্তু 'কেউ কেউ'(Some) বোঝাতে একশব্দ বহুবচনান্ত, যথা-একে বদন্তি (কেউ কেউ বলেন-Some say)।
(২) পঞ্চন্(৫) থেকে অষ্টাদশন্(১৮) পর্যন্ত ১৪-টি শব্দ সর্বদা বহুবচনান্ত এবং তিন লিঙ্গে এদের রূপ সমান হয়, যথা-'পঞ্চ ছাত্রাঃ', 'ষণ্ণাং পুস্তকানাম্' ইত্যাদি।
(৩) ঊনবিংশতি(১৯) থেকে নবনবতি(৯৯) পর্যন্ত শব্দসমূহ একবচনান্ত। এদের মধ্যে ত-কারান্ত (ত্রিংশৎ, চত্বারিংশৎ, পঞ্চাশৎ, পঞ্চপঞ্চাশৎ প্রভৃতি শব্দ নিত্য পুংলিঙ্গ বা অজহল্লিঙ্গ) শব্দের রূপ ভূভৃৎ-শব্দের ন্যায় এবং ই-কারান্ত(বিংশতিঃ, ষষ্টিঃ, সপ্ততিঃ, অশীতিঃ প্রভৃতি শব্দ নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ বা অজহল্লিঙ্গ) শব্দের রূপ মতি-শব্দের ন্যায় হয়। যথা- পঞ্চাশতা ছাত্রৈঃ (পঞ্চাশ জন ছাত্রের দ্বারা), বিংশতিঃ ছাত্রাঃ(কুড়ি জন ছাত্র)।
(৪) শত, সহস্র, অযুত, লক্ষ ও নিযুত-শব্দ নিত্য ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত। এদের রূপ ফল-শব্দের ন্যায়। যথা-শতং অশ্বাঃ, সহস্রং বালকাঃ।
(৫) কোটি-শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ ও একবচনান্ত। রূপ মতি-শব্দের ন্যায়। যথা- কোটিঃ পুস্তকানি।
(৬) অনেক শব্দ সর্বদা-ই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়, যথা-অনেকে বিহগাঃ(অনেকগুলি পাখি)।
(৭) এক হতে অষ্টাদশন্ পর্যন্ত ১৮টি শব্দ কেবলমাত্র বিশেষণভাবেই ব্যবহৃত হয়। এরা বিশেষ্য ভাবে কখনও ব্যবহৃত হতে পারে না। বিশেষণ বলে বিশেষ্য-অনুযায়ী এদের লিঙ্গ, বিভক্তি, বচন হয়। যথা-'একঃ শিশুঃ', 'একং ফলম্', 'চতস্রঃ বালিকাঃ', 'অষ্টাদশ বৃক্ষাঃ' ইত্যাদি।
(৮) ঊনবিংশতি থেকে যাবতীয় সংখ্যাবাচক শব্দ বিশেষণ ও বিশেষ্য উভয়ভাবেই ব্যবহৃত হয়। যে ভাবেই ব্যবহৃত হোক না কেন, এরা সর্বদা একবচনান্ত হয়ে থাকে, কিন্তু এদের বিশেষ্য বহুবচনান্ত হয়। বিশেষণরূপে ব্যবহার, যথা- ঊনবিংশতিঃ বৃক্ষাঃ, শতং পুষ্পাণি ফলানি বা।
বিশেষ্যরূপে ব্যবহার, যথা- 'ছাত্রাণাং বিংশতিঃ', 'পুস্তকানাং সহস্রম্' ইত্যাদি (বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় এরা যাদের সংখ্যা বোঝায় সেই বিশেষ্যের শেষে ষষ্ঠী বিভক্তি হয় )।
বিশেষণ বিংশতি প্রভৃতির দ্বিবচন ও বহুবচন হতে পারে না। অতএব, 'দ্বে বিংশতী ফলানি'-এরূপ প্রয়োগ অশুদ্ধ (ভুল)।
(১) ঊনবিংশতি, বিংশতি, একবিংশতি প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দের উত্তর ডট্ বা তমট্ প্রত্যয় যোগ করে পূরণবাচক সংখ্যা করা হয়। যথা- একবিংশতি+ডট্=একবিংশঃ, একবিংশতি+তমট্=একবিংশতিতমঃ। এরূপ ঊনবিংশঃ বা ঊনবিংশতিতমঃ, দ্বাত্রিংশঃ বা দ্বাত্রিংশত্তমঃ প্রভৃতি।
(২) একাদশ প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দের উত্তর পূরণ অর্থে ডট্ হয়, যথা- একাদশঃ, ত্রয়োদশঃ ইত্যাদি।
(৩) অন্যান্য পূরণবাচক শব্দগুলি হল- প্রথমঃ, দ্বিতীয়ঃ, তৃতীয়ঃ, চতুর্থঃ, পঞ্চমঃ, ষষ্ঠঃ, সপ্তমঃ, অষ্টমঃ, নবমঃ, দশমঃ, বিংশঃ বা বিংশতিতমঃ, ত্রিংশঃ বা ত্রিংশত্তমঃ, ষষ্টিতমঃ, সপ্ততিতমঃ, অশীতিতমঃ, নবতিতমঃ, শততমঃ, সহস্রতমঃ ইত্যাদি।
(১) সকৃৎ(একবার), দ্বিঃ(দুইবার), এরূপ- ত্রিঃ, চতুঃ, পঞ্চকৃত্বঃ, ষট্কৃত্বঃ, সপ্তকৃত্বঃ, অষ্টকৃত্বঃ প্রভৃতি।
(২) একধা(এক প্রকারে, ভাবে, দিকে), এরূপ- দ্বিধা, ত্রিধা, চতুর্ধা, পঞ্চধা, ষড়্ধা বা ষোঢ়া, সপ্তধা ইত্যাদি।
(৩) একশঃ(একে একে বা এক এক করিয়া), এরূপ- দ্বিশঃ, ত্রিশঃ, শতশঃ প্রভৃতি।
মনে রাখতে হবে যে, এই উদাহরণগুলি অব্যয়।
No comments:
Post a Comment