Thursday, December 31, 2020

পাঠ ৫- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়

 বর্ণ-বিশ্লেষণ

(১) সংযুক্তবর্ণসকল পর পর পৃথক্ পৃথক্ উল্লেখ করার নাম বর্ণ-বিশ্লেষণ

(২) প্রত্যেক ব্যঞ্জনবর্ণেই হসন্ত-চিহ্ন থাকে, পরে স্বরবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ঐ হসন্ত-চিহ্ন লুপ্ত হয়।

(৩) ব্যঞ্জনবর্ণের অব্যবহিত পূর্বে র্ থাকলে তা রেফ হয়ে পরবর্ণের মস্তকে যায়, আর ব্যঞ্জনবর্ণের অব্যবহিত পরে র্ থাকলে তা র-ফলা হয়ে পূর্ববর্ণের নিম্নে যুক্ত হয়।

(৪) অনুস্বার এবং বিসর্গের সংগে কোনো পরবর্তী স্বরবর্ণ যুক্ত হয় না।

(৫) শব্দশেষে হসন্ত-চিহ্নযুক্ত বর্ণ থাকলে তার সংগে কোনো স্বরবর্ণ যুক্ত হয় না।

বর্ণ-বিশ্লেষণের উদাহরণ, যথা- 

সরস্বতী=স্+অ+র্+অ+স্+ব্+অ+ত্+ঈ।

নক্ষত্র=ন্+অ+ক্+ষ্+অ+ত্+র্+অ।

ব্রহ্মা= ব্+র্+অ+হ্+ম্+আ।


সন্ধি

দুই বা ততোধিক বর্ণের অতি নিকটবর্তী হওয়াকে সংহিতা বা সন্ধি বলে।

সন্ধিকার্য- সন্ধি হলে কখনও কখনও বর্ণব্যত্যয়(বর্ণপরিবর্তন) হয়। এই বর্ণব্যত্যয়কে সন্ধিকার্য বলে। উদাহরণ যথা- যদি+অপি=যদ্য্+অপি। সাধারণতঃ সবাই এই সন্ধিকার্যকেই সন্ধি বলে।
অর্থাৎ সংহিতা(Closeness)+বর্ণব্যত্যয়(Change)=সন্ধি (Sandhi/Sandhikārya)

(১) ম্+অ=ম -এখানে বর্ণ দুটির মধ্যে সংহিতা(Closeness)হয়েছে, কিন্তু বর্ণের কোনো পরিবর্তন(Change) হয় নি। তাই এটিকে সন্ধি বলা যায় না।

(২) যদি+অপি=যদ্যপি। যদ্ ই+অ পি=যদ্ য্+অ পি=যদ্যপি। -এখানে সংহিতা-র সাথে সাথে বর্ণের পরিবর্তনও হয়েছে(ই-কারের স্থানে য্-কার হয়েছে)। তাই এটিকে সন্ধি বলা হয়।

সন্ধি তিন প্রকার-

(ক) স্বরসন্ধি।

(খ) ব্যঞ্জনসন্ধি।

(গ) বিসর্গসন্ধি।


স্বরসন্ধি

স্বরবর্ণে স্বরবর্ণে যে সন্ধি হয়, তাকে স্বরসন্ধি বলে।

(১) অ/আ+অ/আ=আ।

শশ+অঙ্কঃ=শশাঙ্কঃ। বিদ্যা+আলয়ঃ=বিদ্যালয়ঃ।

(২) ই/ঈ+ই/ঈ=ঈ।

গিরি+ইন্দ্রঃ=গিরীন্দ্রঃ। ক্ষিতি+ঈশঃ=ক্ষিতীশঃ।

(৩) উ/ঊ+উ/ঊ=ঊ।

বিধু+উদয়ঃ=বিধূদয়ঃ। বধূ+উৎসবঃ= বধূৎসবঃ। লঘু+ঊর্মিঃ= লঘূর্মিঃ।

(৪) ঋ+ঋ=ৠ(দীর্ঘ ঋ-কার)।

পিতৃ+ঋণম্= পিতৄণম্।

(৫) অ/ আ+ই/ঈ= এ।

দেব+ইন্দ্রঃ= দেবেন্দ্রঃ। গণ+ঈশঃ= গণেশঃ। রমা+ঈশঃ= রমেশঃ।

(৬) অ/আ+উ/ঊ= ও।

নীল+উৎপলম্= নীলোৎপলম্। গঙ্গা+উদকম্= গঙ্গোদকম্। নব+ ঊঢ়া= নবোঢ়া।

(৭) অ/আ+ঋ= অর্।

দেব+ঋষিঃ= দেবর্ষিঃ। মহা+ঋষিঃ= মহর্ষিঃ।

(৮) অ/আ+এ/ঐ= ঐ।

অদ্য+এব= অদ্যৈব। তথা+এব= তথৈব।

(৯) অ/আ+ও/ঔ= ঔ।

বন+ওষধিঃ= বনৌষধিঃ। মহা+ওষধিঃ= মহৌষধিঃ। চিত্ত+ঔদার্যম্= চিত্তৌদার্যম্।

(১০) ই, ঈ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে ই, ঈ স্থানে য্ হয়।

যদি+অপি= যদ্যপি। অতি+আচারঃ= অত্যাচারঃ। দেবী+আগচ্ছতি= দেব্যাগচ্ছতি।

(১১) উ, ঊ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে উ, ঊ স্থানে ব্ হয়।

সু+আগতম্= স্বাগতম্। সরযূ+অম্বু= সরয্বম্বু

(১২) ঋ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে ঋ স্থানে অর্ হয়।

মাতৃ+আদেশঃ= মাত্রাদেশঃ। পিতৃ+ইচ্ছা= পিত্রিচ্ছা।

(১৩) স্বরবর্ণ পরে থাকলে এ-কার স্থানে অয়্, ঐ-কার স্থানে আয়্, ও-কার স্থানে অব্, ঔ-কার স্থানে আব্ হয়।

শে+অনম্= শয়নম্।  বিনৈ+অকঃ= বিনায়কঃ। পো+অনঃ= পবনঃ। ভৌ+অকঃ= ভাবুকঃ।

(১৪) পদের অন্তস্থিত এ-কার কিংবা ও-কারের পর অকার থাকলে তা লোপ হয়। লোপ হলে অকারের যে চিহ্ন থাকে তাকে লুপ্ত অ-কার() বলে।

গৃহে+অস্মিন্= গৃহেঽস্মিন্। প্রভো+ অনুগৃহাণ= প্রভোঽনুগৃহাণ।


ব্যঞ্জনসন্ধি

ব্যঞ্জনবর্ণে স্বরবর্ণে বা ব্যঞ্জনবর্ণে ব্যঞ্জনবর্ণে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।

(১) চ্ বা ছ্ পরে থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে চ্ হয়।

সৎ+চরিত্রম্= সচ্চরিত্রম্। এতদ্+ছায়া= এতচ্ছায়া।

(২) জ্ বা ঝ্ পরে থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে জ্ হয়।

উৎ+জ্বলঃ= উজ্জ্বলঃ। তদ্+জন্ম= তজ্জন্ম

(৩) জ্ বা ঝ্ পরে থাকলে ন্ স্থানে ঞ্ হয়।

ভবান্+জীবতু= ভবাঞ্জীবতু। গচ্ছন্+ঝটিতি= গচ্ছঞ্ঝটিতি।

(৪) পদের অন্তস্থিত ত্-কার বা দ্-কারের পর শ্ থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে চ্ এবং শ্ স্থানে ছ্ হয়। 

তৎ+শৃণোতি= তচ্ছৃণোতি। তদ্+শরীরম্= তচ্ছরীরম্।

(৫) পদের অন্তস্থিত ন্-কারের পর শ্ থাকলে ন্-স্থানে ঞ্ এবং শ্ স্থানে ছ্ হয়।

ধাবন্+শশঃ= ধাবঞ্ছশঃ। মহান্+শব্দঃ= মহাঞ্ছব্দঃ।

(৬) পদের অন্তস্থিত ত্-কার বা দ্-কারের পর হ্ থাকলে ত্, দ্ স্থানে দ্ এবং হ্ স্থানে ধ্ হয়।

উৎ+হতঃ= উদ্ধতঃ।  বিপদ্+হেতুঃ= বিপদ্ধেতুঃ।

(৭) চ -বর্গের পর ন্ থাকলে ন্ স্থানে ঞ্ হয়।

যাচ্+না= যাচ্ঞা। যজ্+নঃ= যজ্ঞঃ। রাজ্+নী= রাজ্ঞী।

(৮) ট্ বা ঠ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী ত্ ও দ্ স্থানে ট্ হয়।

মহৎ+টঙ্কনম্= মহট্টঙ্কনম্। তদ্+টীকা= তট্টীকা।

(৯) ড্ বা ঢ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী ত্ ও দ্ স্থানে ড্ হয়।

উৎ+ডীনঃ= উড্ডীনঃ। এতদ্+ঢক্কা= এতড্ঢক্কা।

(১০) ষ্-কারের পরস্থিত ত্ স্থানে ট্ ও থ্ স্থানে ঠ্ হয়।

আকৃষ্+তঃ= আকৃষ্টঃ। ষষ্+থঃ= ষষ্ঠঃ।

(১১) ল্ পরে থাকলে ত্, দ্ ও ন্ স্থানে ল্ হয়। এবং ন্-স্থানে যে 'ল্' হয়, তা অনুনাসিক হয়।

উৎ+লিখিতঃ= উল্লিখিতঃ। তদ্+লীলায়িতম্= তল্লীলায়িতম্। মহান্+লাভঃ= মহাল্ঁলাভঃ।    বিদ্বান্+লিখতি= বিদ্বাল্ঁ লিখতি।

(১২) স্বরবর্ণ পরে থাকলে পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরের পরস্থিত পদান্তস্থ ন্-কার দ্বিত্ব হয়।

হসন্+আগতঃ= হসন্নাগতঃ। ধাবন্+অশ্বঃ= ধাবন্নশ্বঃ।

(১৩) ঐ ন্ দীর্ঘস্বরের পর থাকলে ন্-কারের দ্বিত্ব হয় না, কেবল পরবর্ণেই যুক্ত হয়।

মহান্+অনুগ্রহঃ= মহাননুুগ্রহঃ। কবীন্+আহ্বয়= কবীনাহ্বয়।

(১৪)  চ্ বা ছ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ন্-স্থানে অনুস্বার হয় এবং চ্ ও ছ্ স্থানে যথাক্রমে শ্চ্ ও শ্ছ্ হয়।

হসন্+চলতি= হসংশ্চলতি। ধাবন্+ছাগঃ= ধাবংশ্ছাগঃ।

(১৫) ট্ বা ঠ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ন্-স্থানে অনুস্বার হয় এবং ট্ ও ঠ্ স্থানে যথাক্রমে ষ্ট্ ও ষ্ঠ্ হয়।

মহান্+টঙ্কারঃ= মহাংষ্টঙ্কারঃ। হসন্+ঠক্কুরঃ= হসংষ্ঠক্কুরঃ।

(১৬)  ত্ বা থ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ন্-স্থানে অনুস্বার হয় এবং ত্ ও থ্-স্থানে যথাক্রমে ন্ত্ ও স্থ্ হয়।

পতন্+তরুঃ= পতংস্তরুঃ। মহান্+স্থুৎকারঃ= মহাংস্থুৎকারঃ।

(১৭) শ্ , স্ বা হ্ পরে থাকলে পদমধ্যস্থিত ন্ ও ম্-স্থানে অনুস্বার হয়।

মীমান্+সতে= মীমাংসতে। রম্+স্যতে= রংস্যতে।

(১৮) যে বর্গের বর্ণ পরে থাকে, পদমধ্যস্থিত ন্-স্থানে সেই বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়।

আশন্+কতে= আশঙ্কতে। বন্+চয়তি= বঞ্চয়তি।

(১৯) ত্ পরে থাকলে পদমধ্যস্থিত ম্-স্থানে ন্ হয়।

গম্+তা= গন্তা। শাম্+তঃ= শান্তঃ।  

(২০) স্পর্শবর্ণ(ক-ম পর্যন্ত ২৫টি বর্ণ) পরে থাকলে পদের  অন্তস্থিত ম্-স্থানে অনুস্বার হয় অথবা যে বর্গের বর্ণ পরে থাকে, বিকল্পে সেই বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়।

কিম্+করোষি= কিং করোষি, কিঙ্করোষি। দেবম্+নমতি = দেবং নমতি, দেবন্নমতি। নদীম্+তরতি= নদীং তরতি, নদীন্তরতি।

(২১) ছ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরের পর চ্-র আগম হয় এবং চ্ ও ছ্ মিলিয়া চ্ছ্ হয়।

পরি+ছদঃ= পরিচ্ছদঃ। বি+ছেদঃ= বিচ্ছেদঃ। পূর্ণ+ছেদঃ= পূর্ণচ্ছেদঃ।

(২২) ছ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী দীর্ঘস্বরের পর বিকল্পে চ্-র আগম হয়।

লতা+ছায়া= লতাচ্ছায়া, লতাছায়া। লক্ষ্মী+ছায়া= লক্ষ্মীচ্ছায়া, লক্ষ্মীছায়া।

(২৩) স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ বর্ণ বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ক্-স্থানে গ্, চ্-স্থানে জ্, ট্-স্থানে ড্ এবং প্-স্থানে ব্ হয়।

দিক্+অন্তঃ= দিগন্তঃ। দিক্+গজঃ= দিগ্গজঃ। দিক্+ভাগঃ= দিগ্ভাগঃ। সম্যক্+বদতি= সম্যগ্বদতি। দিক্+হস্তী= দিগ্হস্তী।

(২৪) স্বরবর্ণ বা গ্ ঘ্ দ্ ধ্ ব্ ভ্ য্ র্ ব্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ত্-স্থানে দ্ হয়।

জগৎ+ঈশঃ= জগদীশঃ। বৃহৎ+গহনম্= বৃহদ্গহনম্। জগৎ+বন্ধুঃ= জগদ্বন্ধুঃ। উৎ+যোগঃ= উদ্যোগঃ। মহৎ+বনম্= মহদ্বনম্।


বিসর্গসন্ধি

বিসর্গের সঙ্গে স্বর বা ব্যঞ্জনবর্ণের যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। বিসর্গ দু-প্রকার-স্-জাতর্-জাত। স্-স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে স্-জাত(পয়স্>পয়ঃ); র্-স্থানে যে বিসর্গ হয়, তাকে র্-জাত(প্রাতর্> প্রাতঃ)বিসর্গ বলে।

(১) চ্ বা ছ্ পরে থাকলে, স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গস্থানেই শ্ হয়।

পূর্ণঃ+চন্দ্রঃ= পূর্ণশ্চন্দ্রঃ। শিরঃ+ছেদঃ= শিরশ্ছেদঃ।

(২) ট্ বা ঠ্ পরে থাকলে, স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গস্থানেই ষ্ হয়।

ধনুঃ+টঙ্কারঃ= ধনুষ্টঙ্কারঃ। স্থিরঃ+ঠক্কুরঃ= স্থিরষ্ঠক্কুরঃ।

(৩) ত্ বা থ্ পরে থাকলে, স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গস্থানেই স্ হয়।

উন্নতঃ+তরুঃ= উন্নতস্তরুঃ। ক্ষিপ্তঃ+থুৎকারঃ= ক্ষিপ্তস্থুৎকারঃ।

(৪) অ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গের পর অ থাকলে, পূর্ব অ-কার এবং বিসর্গ উভয় স্থানে   ও-কার হয়। ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং পরের অ-কারের লোপ হয়, লুপ্ত অ-কারের চিহ্ন() থাকে।

প্রথমঃ+অধ্যায়ঃ= প্রথমোঽধ্যায়ঃ। নরঃ+অয়ম্= নরোঽয়ম্।

(৫) বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ  বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে, অ-কার ও আ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গ উভয়ে মিলে  ও-কার হয়।  ঐ ও-কার আগের বর্ণে যুক্ত হয়।

নরঃ+গচ্ছতি= নরো গচ্ছতি। পূর্ণঃ+ঘটঃ= পূর্ণো ঘটঃ। সদ্যঃ+জাতঃ= সদ্যো জাতঃ। মনঃ+যোগঃ= মনোযোগঃ।

(৬) স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ  বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে, অ-কার ও আ-কার ভিন্ন স্বরবর্ণের পরের  স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গ স্থানে র্ হয়।

গতিঃ+ইয়ম্= গতিরিয়ম্। রবেঃ+উদয়ঃ= রবেরুদয়ঃ। নিঃ+ভয়ঃ= নির্ভয়ঃ। বহিঃ+যোগঃ= বহির্যোগঃ। হবিঃ+ঘ্রাণম্= হবির্ঘ্রাণম্।

(৭)  স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ  বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে, অ-কার ও আ-কারের পরস্থিত র্-জাত  বিসর্গস্থানে র্ হয়।

পুনঃ+অপি= পুনরপি। প্রাতঃ+ভ্রমণম্= প্রাতর্ভ্রমণম্। দুহিতঃ+যাহি= দুহিতর্যাহি।

(৮) র্-কার পরে থাকলে র্-জাত ও স্-জাত বিসর্গস্থানে যে র্-কার হয়, তার লোপ হয় এবং পূর্বের স্বর হ্রস্ব থাকলে দীর্ঘ হয় অর্থাৎ অ, ই, উ স্থানে যথাক্রমে আ, ঈ, ঊ হয়।

পিতঃ+রক্ষ= পিতারক্ষ। নিঃ+রসঃ= নীরসঃ। বিধুঃ+রাজতে= বিধূরাজতে।

(৯) স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে আ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গের লোপ হয়। বিসর্গ লোপের পর আর সন্ধি হয় না।

অশ্বাঃ+অমী= অশ্বা অমী। হতাঃ+গজাঃ= হতা গজাঃ। কৃতাঃ+ঘটাঃ= কৃতা ঘটাঃ। অতীতাঃ+মাসাঃ= অতীতা মাসাঃ। এতাঃ+লতাঃ= এতা লতাঃ। বালকাঃ+হসন্তি= বালকা হসন্তি।

(১০) অ-কার ভিন্ন যে কোনো স্বরবর্ণ অথবা যে কোনো ব্যঞ্জনবর্ণ পরে থাকলে 'সঃ' ও 'এষঃ' -এই দুটি পদের স্-জাত বিসর্গের লোপ হয়। বিসর্গের লোপের পর আর সন্ধি হয় না।

সঃ+আগতঃ= স আগতঃ। এষঃ+আগচ্ছতি= এষ আগচ্ছতি। এষঃ+বালকঃ= এষ বালকঃ।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-

পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
ব্যাকরণ কণিকা-স্বামী অমলানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য।

প্রশ্নপত্র (Question Paper): https://forms.gle/TK3gxTJuQRnxaJWAA



Friday, December 4, 2020

পাঠ ৪- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়


উদ্দেশ্য ও বিধেয়(Subject & Predicate)

(১) একটি সামগ্রিক বাক্যে যার উদ্দেশ্যে কোনো বিবরণ দেওয়া হয় তা উদ্দেশ্য এবং ঐ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যে বিবরণ দিলে বাক্যার্থের পরিসমাপ্তি ঘটে তা বিধেয়। যেমন-শিশুঃ হসতি। এখানে শিশুঃ উদ্দেশ্য এবং হসতি বিধেয়। সাধারণতঃ কর্তৃবাচ্যের বাক্যে 'কর্তা' তার বিশেষণাদি, কর্মবাচ্যের বাক্যে 'কর্ম' উদ্দেশ্য হয় এবং বিধেয় হয় 'ক্রিয়া' অথবা যেখানে ক্রিয়া ঊহ্য থাকে সেখানে 'বিশেষণ'। উদ্দেশ্যে ও বিধেয়ে বিভক্তি সাধারণতঃ সমান থাকে, যথা-  ছাত্রাঃ পঠন্তি। অজহল্লিঙ্গ(যে শব্দের লিঙ্গ নিত্য) শব্দের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের লিঙ্গ বচনের ব্যতিক্রম হয়, যথা- উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্। বিদ্যা রূপং কুরূপাণাম্। (এগুলিতে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদে লিঙ্গের পার্থক্য)। বেদাঃ প্রমাণম্। গুণাঃ পূজাস্থানং গুণিষু। শিক্ষকাস্তে পূজাস্পদম্(বচনের পার্থক্য)।

উদ্দেশ্যে চ বিধেয়ে চ বিভক্তিস্তু সমা ভবেৎ।
কদাচিজ্ জায়তে তত্র বৈষম্যং লিঙ্গ-সংখ্যয়োঃ।।

(২) উদ্দেশ্যে ও বিধেয়ের মধ্যে প্রকৃতি ও বিকৃতি ভাব থাকলে উদ্দেশ্যের যে বচন, ক্রিয়ারও সেই বচন হয়। উদাহরণ যথা- সুবর্ণং কুণ্ডলানি ভবতি। এখানে 'সুবর্ণম্' প্রকৃতি ও 'কুণ্ডলানি' বিকৃতি। প্রকৃতি 'সুবর্ণম্' একবচনান্ত বলে ক্রিয়া একবচনান্ত হল।

বিশেষ্য ও বিশেষণ সমন্বয়

(১) দুই বা তার বেশি বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ যদি একই বিশেষণের সঙ্গে যুক্ত হয় তবে সাধারণতঃ বিশেষণের বচন বিশেষ্য বা সর্বনামের বচনের সমষ্টিদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যথা- নিদ্রা ভয়ঞ্চ সর্বেষাং সাধারণে। কিন্তু 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী'- এরূপও প্রয়োগ দেখা যায়।

(২) পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বিশেষ্যের সাধারণ বিশেষণটি পুংলিঙ্গ হয়। যথা- পিতা মাতা চ অস্মাকং পূজনীয়ৌ

(৩) ক্লীবলিঙ্গের সংগে পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ অথবা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বিশেষ্যের সাধারণ বিশেষণটি ক্লীবলিঙ্গ এবং বিকল্পে একবচনও হতে পারে(পক্ষে বিশেষ্যের বচনের সমষ্টি অনুসারে বচন হবে)। যথা- বৃক্ষাঃ লতাঃ পুষ্পাণি চ সুন্দরাণি দৃশ্যন্তে। বৃথাবাক্যং পরনিন্দা চ পরিত্যাজ্যম্(পরিত্যাজ্যে বা)।

(৪) একটি সামগ্রিক বাক্যের বিভিন্ন লিঙ্গের বিশেষ্যসমূহের মধ্যে বিশেষণটি সাধারণতঃ তার নিকটবর্তী বিশেষ্যের লিঙ্গ ও বচন গ্রহণ করে। যথা- 'যস্য বীর্যেণ কৃতিনঃ বয়ং চ ভুবনানি চ'। -এখানে 'কৃতিনঃ' বিশেষণটি নিকটবর্তী বিশেষ্য 'বয়ম্' পদের লিঙ্গ ও বচন গ্রহণ করেছে,  বিশেষ্য 'ভুবনানি' পদের নয়।

কর্তা ও ক্রিয়ার সমন্বয়

(১) অস্মদ্ অর্থাৎ অহম্, আবাম্ বা বয়ম্ কর্তা হলে ক্রিয়ায় উত্তম পুরুষের বিভক্তি হয়। যুষ্মদ্ অর্থাৎ ত্বম্, যুবাম্ বা যূয়ম্ কর্তা হলে ক্রিয়ার মধ্যম পুরুষের বিভক্তি হয়। অস্মদ্ ও যুষ্মদ্ ভিন্ন অর্থাৎ সঃ, তৌ, তে, নরঃ, নরৌ, নরাঃ ইত্যাদি কর্তা হলে ক্রিয়ায় প্রথম পুরুষের বিভক্তি হয়। যথা- অহং গচ্ছামি, ত্বং গচ্ছসি, স গচ্ছতি।

(২) কর্তায় প্রথমার একবচন থাকলে ক্রিয়াতে একবচনের বিভক্তি হয়, কর্তায় প্রথমার দ্বিবচন থাকলে ক্রিয়াতেও দ্বিবচনের বিভক্তি হয় এবং কর্তায় প্রথমার বহুবচন থাকলে ক্রিয়াতেও বহুবচনের বিভক্তি হয়। যথা-অহং করোমি, আবাং কুর্বঃ, বয়ং কুর্মঃ, শিশবঃ খেলন্তি। 

(৩) যদি একই ক্রিয়ার দুই বা বহু কর্তা থাকে, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্তার বচন ধরে সমুদায়ে যে বচন হয়, ক্রিয়ারও সেই বচন হয়। অর্থাৎ ক্রিয়ার বচন কর্তৃপদসমূহের সমষ্টিদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। যথা- অশ্বৌ গজশ্চ গচ্ছন্তি, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ সোমদত্তশ্চ গচ্ছন্তি, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তশ্চ গচ্ছতঃ।

(৪) একবচনে অনেকগুলি কর্তা থাকলে, ক্রিয়া একবচনও হয়, যথা- দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ সোমদত্তশ্চ গচ্ছতি, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তশ্চ গচ্ছতি।

(৫) কখনও আবার নিকটবর্তী কর্তা-অনুসারে ক্রিয়া হয়, যথা- "অহশ্চ রাত্রিশ্চ উভে চ সন্ধ্যে ধর্মোঽপি  জানাতি নরস্য বৃত্তম্"।

(৬) যদি একই ক্রিয়ার কর্তা প্রথম ও উত্তম পুরুষের বা মধ্যম ও উত্তম পুরুষের অথবা প্রথম, মধ্যম ও উত্তম পুরুষের হয়, সেক্ষেত্রে ক্রিয়াপদটি উত্তম পুরুষের হয়। যথা-দেবদত্তঃ অহং চ গমিষ্যাবঃ, ত্বম্ অহং চ গমিষ্যাবঃ, দেবদত্তঃ ত্বম্ অহং চ গমিষ্যামঃ।

(৭) যদি একই ক্রিয়ার কর্তা প্রথম ও মধ্যম পুরুষের হয়, সেক্ষেত্রে ক্রিয়াপদটি মধ্যম পুরুষের হয়, যথা-দেবদত্তঃ ত্বং চ গচ্ছতম্, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ ত্বং চ গচ্ছত।

(৮) যদি একই ক্রিয়ার দুই বা দুই-র অধিক বিভিন্ন পুরুষের কর্তা 'বা'-এই অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে, তাহলে ক্রিয়ার অব্যবহিত পূর্বে যে কর্তৃপদ থাকে, তার পুরুষ ও বচন অনুসারে ক্রিয়ার পুরুষ ও বচন হয়। যথা-দেবদত্তঃ অহং বা গমিষ্যামি। স ত্বং বা গমিষ্যসি। তে বালকাঃ ইয়ং বালিকা বা গমিষ্যতি।

(৯) যখন বাক্যের মধ্যে 'বা' থাকে ও প্রত্যেকটি কর্তা একবচন হয়, তখন ক্রিয়াটিও একবচন হবে। যথা-দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ সোমদত্তঃ বা গচ্ছতু।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-
Helps to the Study of Sanskrit-জানকীনাথ শাস্ত্রী।
পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র-সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য

প্রশ্নপত্র(Question Paper): https://forms.gle/JHPnNisnwNKpJtgT7


Tuesday, November 24, 2020

পাঠ ৩- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়

 শব্দরূপ(Declension)

(১) ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত শব্দের প্রথমা ও দ্বিতীয়ার দ্বিবচনে শেষ অক্ষর সর্বদা দীর্ঘ হবে, অর্থাৎ ই-কার ঈ-কার হবে এবং উ-কার ঊ-কার হবে, যথা-মুনী, পতী, সাধূ, মতী, ধেনূ, বারিণী, মধুনী ইত্যাদি।

(২) অ-কারান্ত ভিন্ন স্বরান্ত ক্লীবলিঙ্গ শব্দগুলির প্রথমা ও দ্বিতীয়া বিভক্তির দ্বিবচনে ও বহুবচনে যে সকল পদ হয়, তাদের  দ্বিবচনে শেষ দুটি বর্ণের স্বরসংযোগ 'হ্রস্ব দীর্ঘ' এবং বহুবচনে শেষ দুটি বর্ণের স্বরসংযোগ  'দীর্ঘ হ্রস্ব' হয়। উদাহরণ যথা- বারিণী(দ্বিবচন), বারীণি(বহুবচন); মধুনী(দ্বিবচন), মধূনি(বহুবচন) ইত্যাদি। 

(৩) দ্বিতীয়ার বহুবচনে যে পদ হয় তার শেষে যদি 'ন্' থাকে, তাহলে ঐ 'ন্'-এর পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হবে, যথা- নর-নরান্, মুনি-মুনীন্, পতি-পতীন্, সখি-সখীন্, সাধু-সাধূন্ প্রভৃতি।

(৪) অস্মদ্ ও যুষ্মদ্-শব্দের -মা, নৌ, নঃ, মে, ত্বা, বাম্, বঃ, তে-এই সংক্ষিপ্ত বিকল্প রূপগুলি-
(ক) বাক্যের বা শ্লোকের চরণের আরম্ভে প্রযুক্ত হয় না, যথা- বাক্যের আরম্ভে- 'তব লেখনীং গৃহাণ', 'আবাং সা কথয়তি' প্রভৃতি। শ্লোকের চরণের আরম্ভে-
 ত্বাং স রক্ষতি যত্নেন মাং স দ্বেষ্টি নিরন্তরম্।
তবাত্র ন দোষঃ কশ্চিন্ মম দোষোঽস্তি কশ্চন।।
(খ)  চ, বা, হা, অহ, এব -এই পাঁচটি অব্যয় শব্দের যোগে এই বিকল্পপদগুলির প্রয়োগ হয় না, যথা-শিক্ষকঃ ত্বাং মাং চ উপদিশতি। পুস্তকং মম এব ইত্যাদি। কিন্তু 'চ' প্রভৃতির সঙ্গে সাক্ষাৎ যোগ না থাকলে হয়, যথা-'হরঃ হরিশ্চ মে প্রভুঃ'।
(গ) অচাক্ষুষ জ্ঞানার্থক ধাতুর যোগে এই সব আদেশ হয় না। যথা-মনসা ত্বাং ধ্যায়তি। অচাক্ষুষ জ্ঞানার্থক ধাতুর সঙ্গে পরম্পরা সম্বন্ধ থাকলেও হয় না, যথা-ভক্তঃ তব রূপং স্মরতি। চাক্ষুষ জ্ঞানে হয়, যথা- চক্ষুষা ভক্তঃ ত্বা পশ্যতি । 
(ঘ) বাক্যের প্রথমে সম্বোধন পদ থাকলে, ঐ সম্বোধন পদের পরেই অস্মদ্ ও যুষ্মদ্-শব্দের বিকল্পপদগুলির প্রয়োগ হয় না, যথা-অগ্নে তব ভক্তং রক্ষ।
(ঙ) অস্মদ্ ও যুষ্মদ্-শব্দের পঞ্চমীর একবচনের ও বহুবচনের পদসমূহ(ত্বৎ, যুষ্মৎ, মৎ এবং অস্মৎ) সংস্কৃতে প্রযুক্ত হয় না। সাধারণতঃ এদের উত্তর তসিল্(তস্) প্রত্যয় যোগ করে প্রয়োগ করতে হয়। যথা-ত্বত্তঃ(তোমার কাছ থেকে), যুষ্মত্তঃ(তোমাদের কাছ থেকে), মত্তঃ(আমার কাছ থেকে), অস্মত্তঃ(আমাদের কাছ থেকে)।

(৫) অবী(ঋতুমতী), তন্ত্রী(বীণাগুণ), তরী(নৌকা), লক্ষ্মী(বিষ্ণুপত্নী/শোভা/কান্তি/সম্পত্তি), হ্রী(লজ্জা), ধী(বুদ্ধি) এবং শ্রী(শোভা)-শব্দের প্রথমা ও সম্বোধনের একবচনে সুবিভক্তির লোপ হয় না এবং হ্রস্ব হয় না, যথা- লক্ষ্মীঃ(প্রথমার একবচন), হে লক্ষ্মীঃ(সম্বোধনের একবচন)। এরূপ অবী, তন্ত্রী, তরী, হ্রী, ধী এবং শ্রী।

-অবী-তন্ত্রী-তরী-লক্ষ্মী-হ্রী-ধী-শ্রীণামুণাদিতঃ।
স্ত্রীলিঙ্গে বর্তমানানাং ন সুলোপঃ কদাচন।।

(৬) অম্বার্থনদ্যোর্হ্রস্বঃ- সম্বোধনের একবচনে অম্বার্থক শব্দ এবং নদীসংজ্ঞক শব্দের শেষ অক্ষর হ্রস্ব হয়, যথা-অম্বার্থক শব্দ-হে অম্ব (জগদম্বা-শব্দের রূপ অম্বা-শব্দের ন্যায়, কিন্তু কোনো নারীর বা দেবতার নাম হলে এর রূপ লতা শব্দের ন্যায় হয়, যথা-হে জগদম্বে), হে অল্প প্রভৃতি। নদীসংজ্ঞক শব্দ- হে নদি, হে বধু।

(৭) প্রথম, চরম, তয়প্-প্রত্যয়ান্ত(দ্বয়, ত্রয়, দ্বিতয়, ত্রিতয়, চতুষ্টয় প্রভৃতি), অল্প, অর্ধ, কতিপয় এবং নেম(Half, Part)-শব্দের প্রথমার বহুবচনে(জস্-বিভক্তি-তে) বিকল্পে সর্বনাম  শব্দের ন্যায় রূপ হয়, যথা- প্রথমে, প্রথমাঃ; চরমে, চরমাঃ; দ্বিতয়ে, দ্বিতয়াঃ; অল্পে, অল্পাঃ; নেমে, নেমাঃ ইত্যাদি।

(৮) 'উভ'  এবং 'উভয়'-শব্দের অর্থ এক হলেও উভ-শব্দ কেবল দ্বিবচনে-ই প্রযুক্ত হয়, একবচন ও বহুবচনে নয়, উদাহরণ যথা- এতৌ উভৌ ছাত্রৌ।  উভয়-শব্দ আবার একবচনবহুবচনে-ই ব্যবহৃত হয়, উভয়-শব্দের দ্বিবচন নেই, উদাহরণ যথা- এতদ্ উভয়ং চিন্তয়।  উভয়ে দেবাসুরাঃ সমুদ্রং মমন্থুঃ।

(৯) নিকটবর্তী বস্তু বোঝালে ইদম্-শব্দ, নিকটতর বস্তু(খুব কাছে) বোঝালে এতদ্-শব্দ, দূরবর্তী বস্তু বোঝালে অদস্-শব্দ এবং দৃষ্টির বহির্ভূত বস্তু বোঝালে তদ্-শব্দ প্রযুক্ত হয়। যথাক্রমে উদাহরণ- অয়ম্ অশ্বঃ(This is a horse), এষ মার্জারঃ(This is a cat), অসৌ অশ্বঃ(That is a horse), গচ্ছতি(He goes/He is going)।
ইদমস্তু সন্নিকৃষ্টং সমীপতরবর্তি চৈতদো রূপম্।
অদসস্তু বিপ্রকৃষ্টং তদিতি পরোক্ষে বিজানীয়াৎ।।

অঙ্কবাচক সংখ্যা(Cardinal Numerals)

(১) এক-শব্দ একবচনান্ত, দ্বি-শব্দ দ্বিবচনান্ত, ত্রিচতুর্-শব্দ বহুবচনান্ত। এদের তিনলিঙ্গে তিন প্রকার রূপ হয়, যথা- একঃ সূর্যঃ, একা নারী এবং একং মিত্রম্।  কিন্তু 'কেউ কেউ'(Some) বোঝাতে একশব্দ বহুবচনান্ত, যথা-একে বদন্তি (কেউ কেউ বলেন-Some say)।

(২) পঞ্চন্(৫) থেকে অষ্টাদশন্(১৮) পর্যন্ত ১৪-টি শব্দ সর্বদা বহুবচনান্ত এবং তিন লিঙ্গে এদের রূপ সমান হয়, যথা-'পঞ্চ ছাত্রাঃ', 'ষণ্ণাং পুস্তকানাম্' ইত্যাদি।

(৩) ঊনবিংশতি(১৯) থেকে নবনবতি(৯৯) পর্যন্ত শব্দসমূহ একবচনান্ত। এদের মধ্যে ত-কারান্ত (ত্রিংশৎ, চত্বারিংশৎ, পঞ্চাশৎ, পঞ্চপঞ্চাশৎ প্রভৃতি শব্দ নিত্য পুংলিঙ্গ বা অজহল্লিঙ্গ) শব্দের রূপ ভূভৃৎ-শব্দের ন্যায় এবং ই-কারান্ত(বিংশতিঃ, ষষ্টিঃ, সপ্ততিঃ, অশীতিঃ প্রভৃতি শব্দ নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ বা অজহল্লিঙ্গ) শব্দের রূপ মতি-শব্দের ন্যায় হয়। যথা- পঞ্চাশতা ছাত্রৈঃ (পঞ্চাশ জন ছাত্রের দ্বারা), বিংশতিঃ ছাত্রাঃ(কুড়ি জন ছাত্র)।

(৪) শত, সহস্র, অযুত, লক্ষ ও নিযুত-শব্দ নিত্য ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত। এদের রূপ ফল-শব্দের ন্যায়। যথা-শতং অশ্বাঃ, সহস্রং বালকাঃ।

(৫) কোটি-শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ ও একবচনান্ত। রূপ মতি-শব্দের ন্যায়। যথা- কোটিঃ পুস্তকানি।

(৬) অনেক শব্দ সর্বদা-ই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়, যথা-অনেকে বিহগাঃ(অনেকগুলি পাখি)।

(৭) এক হতে অষ্টাদশন্ পর্যন্ত ১৮টি শব্দ কেবলমাত্র বিশেষণভাবেই ব্যবহৃত হয়। এরা বিশেষ্য ভাবে কখনও ব্যবহৃত হতে পারে না।  বিশেষণ বলে বিশেষ্য-অনুযায়ী এদের লিঙ্গ, বিভক্তি, বচন হয়। যথা-'একঃ শিশুঃ', 'একং ফলম্', 'চতস্রঃ বালিকাঃ', 'অষ্টাদশ বৃক্ষাঃ' ইত্যাদি।

(৮) ঊনবিংশতি থেকে যাবতীয় সংখ্যাবাচক শব্দ বিশেষণ ও বিশেষ্য উভয়ভাবেই ব্যবহৃত হয়। যে ভাবেই ব্যবহৃত হোক না কেন, এরা সর্বদা একবচনান্ত হয়ে থাকে, কিন্তু এদের বিশেষ্য বহুবচনান্ত হয়।  বিশেষণরূপে ব্যবহার, যথা- ঊনবিংশতিঃ বৃক্ষাঃ, শতং পুষ্পাণি ফলানি বা।
বিশেষ্যরূপে ব্যবহার, যথা- 'ছাত্রাণাং বিংশতিঃ', 'পুস্তকানাং সহস্রম্' ইত্যাদি (বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় এরা যাদের সংখ্যা বোঝায় সেই বিশেষ্যের শেষে ষষ্ঠী বিভক্তি হয় )।

(৯) সংখ্যার আবৃত্তি(Repetition) বোঝাতে(অর্থাৎ দুই কুড়ি, তিন শত, শত শত, সহস্র সহস্র ইত্যাদি) বিংশতি প্রভৃতি বিশেষ্য শব্দের দ্বিবচন ও বহুবচন হয়। যথা- 'ফলানাং দ্বে বিংশতী', 'বৃক্ষাণাং ত্রীণি শতানি', 'গৃহাণাং সহস্রেষু' ইত্যাদি।
বিশেষণ বিংশতি প্রভৃতির দ্বিবচন ও বহুবচন হতে পারে না। অতএব, 'দ্বে বিংশতী ফলানি'-এরূপ প্রয়োগ অশুদ্ধ (ভুল)

পূরণবাচক সংখ্যা(Ordinal Numerals)

(১) ঊনবিংশতি, বিংশতি, একবিংশতি প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দের উত্তর ডট্ বা তমট্ প্রত্যয় যোগ করে পূরণবাচক সংখ্যা করা হয়। যথা- একবিংশতি+ডট্=একবিংশঃ, একবিংশতি+তমট্=একবিংশতিতমঃ। এরূপ ঊনবিংশঃ বা ঊনবিংশতিতমঃ, দ্বাত্রিংশঃ বা দ্বাত্রিংশত্তমঃ প্রভৃতি।

(২) একাদশ প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দের উত্তর পূরণ অর্থে ডট্ হয়, যথা- একাদশঃ, ত্রয়োদশঃ ইত্যাদি।

(৩) অন্যান্য পূরণবাচক শব্দগুলি হল- প্রথমঃ, দ্বিতীয়ঃ, তৃতীয়ঃ, চতুর্থঃ, পঞ্চমঃ, ষষ্ঠঃ, সপ্তমঃ, অষ্টমঃ, নবমঃ, দশমঃ, বিংশঃ বা বিংশতিতমঃ, ত্রিংশঃ বা ত্রিংশত্তমঃ, ষষ্টিতমঃ, সপ্ততিতমঃ, অশীতিতমঃ, নবতিতমঃ, শততমঃ, সহস্রতমঃ ইত্যাদি। 

(৪) পূরণবাচক শব্দগুলি বিশেষণ ও একবচনান্ত হয়। এদের রূপ পুংলিঙ্গে নর-শব্দের ন্যায়, ক্লীবলিঙ্গে ফল-শব্দের ন্যায় এবং স্ত্রীলিঙ্গে নদী-শব্দের ন্যায় হয়। কেবল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়-শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে আকারান্ত এবং এদের রূপ লতা শব্দের ন্যায় হয়।

সংখ্যাবাচক ক্রিয়াবিশেষণ(Numeral Adverbs)

(১) সকৃৎ(একবার), দ্বিঃ(দুইবার),  এরূপ- ত্রিঃ, চতুঃ, পঞ্চকৃত্বঃ, ষট্কৃত্বঃ, সপ্তকৃত্বঃ, অষ্টকৃত্বঃ প্রভৃতি।

(২) একধা(এক প্রকারে, ভাবে, দিকে), এরূপ- দ্বিধা, ত্রিধা, চতুর্ধা, পঞ্চধা, ষড়্ধা বা ষোঢ়া, সপ্তধা ইত্যাদি।

(৩) একশঃ(একে একে বা এক এক করিয়া), এরূপ- দ্বিশঃ, ত্রিশঃ, শতশঃ প্রভৃতি।

মনে রাখতে হবে যে, এই উদাহরণগুলি অব্যয়।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-
Helps to the Study of Sanskrit-জানকীনাথ শাস্ত্রী।
পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র-সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য



প্রশ্নপত্র(Question Paper): https://forms.gle/rzbpSjV98GsbkDbh9



Tuesday, November 17, 2020

পাঠ ২- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়


 পুরুষ(Person)

ইংরাজী ও বাংলা ভাষার ন্যায় সংস্কৃতেও পুরুষ তিন প্রকার হয়, যথা-
১) উত্তম পুরুষ (First Person).
২) মধ্যম পুরুষ (Second Person).
৩) প্রথম পুরুষ (Third Person).
 
(ক) অস্মদ্ (আমি বা আমরা-এই অর্থে)- শব্দে উত্তম পুরুষ হয়, উদাহরণ যথা- অহং পশ্যামি, আবাং পশ্যাবঃ, বয়ং পশ্যামঃ ইত্যাদি।
(খ) যুষ্মদ্ (তুমি বা তোমরা-এই অর্থে)-শব্দে মধ্যম পুরুষ হয়, উদাহরণ যথা- ত্বং পশ্যসি, যুবাং পশ্যথঃ, য়ূয়ং পশ্যথ ইত্যাদি।
(গ) তদ্ (সে বা তারা-এই অর্থে) ও অন্যান্য-শব্দে প্রথম পুরুষ হয়, উদাহরণ যথা- গচ্ছতি, তৌ গচ্ছতঃ, তে গচ্ছন্তি, শিশুঃ পিবতি, বালা নৃত্যতি ইত্যাদি।
(ঘ) ভবৎ (আপনি বা আপনারা-এই অর্থে)-শব্দে প্রথম পুরুষ হয়, উদাহরণ যথা-ভবান্ পশ্যতু, ভবন্তৌ পশ্যতাম্, ভবন্তঃ পশ্যন্তু ইত্যাদি। ভবতী (স্ত্রীলিঙ্গে) পশ্যতু ইত্যাদি।
(ঙ) বিশেষ সম্মান অর্থে ভবৎ-শব্দের আগে অত্র বা তত্র-এই পদ দুটি যুক্ত হয়। উদাহরণ যথা- অত্রভবান্ (সম্মানের পাত্র বক্তার সম্মুখে উপস্থিত থাকলে) আগচ্ছতু ইত্যাদি। 'অসাধুদর্শী খলু তত্রভবান্ (সম্মানের পাত্র বক্তার সম্মুখে উপস্থিত না থাকলে) কাশ্যপঃ...'  ইত্যাদি।


বচন(Number)

১.ইংরাজী ও বাংলায় বচন দুটি-একবচন এবং দ্বিবচন। কিন্তু সংস্কৃতে বচন তিনটি-

(ক) একবচন (Singular).

(খ) দ্বিবচন (Dual) .

(গ) বহুবচন (Plural).

সুতরাং ইংরাজী ভাষায় দুটি সংখ্যা বোঝাতে বহুবচন ব্যবহার করা হলেও সংস্কৃতে অনুবাদ করার সময় দ্বিবচনের পদ দিতে হয়। উদাহরণ যথা- An elephant-গজঃ, Two elephants-গজৌ, Elephants-গজাঃ।

২. দ্বয়, দ্বিতয়, যুগল, মিথুন, যুগ্ম, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি শব্দ দুই সংখ্যাবোধক; ত্রয়, ত্রিতয় শব্দ তিন সংখ্যাবোধক;  চতুষ্টয় শব্দ চার সংখ্যাবোধক এবং গণ, মণ্ডল, সমূহ, বর্গ, কুল প্রভৃতি শব্দ বহুত্ববোধক হলেও এগুলি প্রায়ই একবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা-পুস্তকদ্বয়ম্, বৎসরদ্বিতয়ম্, বৃক্ষযুগলম্, বিহগমিথুনম্, বিহগযুগ্মম্, মন্ত্রদ্বন্দ্বম্, পুস্তকত্রয়ম্, বৎসরত্রয়ম্, পুস্তকচতুষ্টয়ম্, মিত্রগণঃ, মুনিমণ্ডলম্, বন্ধুসমূহঃ, বন্ধুবর্গঃ, গুরুকুলম্ ইত্যাদি।

কিন্তু পৃথক্ পৃথক্ অনেকগুলি দল বোঝালে যুগল, মিথুন, যুগ্ম, দ্বন্দ্ব, গণ, মণ্ডল প্রভৃতি শব্দের বহুবচন হতে পারে। যেমন- বিহগযুগলানি-Many Couples of birds, মৃগমিথুনানি বা মৃগদ্বন্দ্বানি-Many couples of deer, মুনিগণাঃ- Many groups of Sages ইত্যাদি।

৩) পুংলিঙ্গে দার(স্ত্রী), অক্ষত (আতপ চাল), লাজ (খই), অসু (প্রাণ), প্রাণ (জীবন)-"লাজাক্ষতদারাসূনাং বহুত্বঞ্চ"(কিন্তু প্রাণ-শব্দ বায়ুবিশেষ বোঝালে তিন বচনেই প্রযুক্ত হয়) এবং স্ত্রীলিঙ্গে অপ্ (জল), সুমনস্ (পুষ্প), সমা (বৎসর), সিকতা (বালুকা বা বালুকাময় ভূমি) ও বর্ষা-"অপ্-সুমনস্-সমা-সিকতা-বর্ষাণাং বহুত্বঞ্চ"-এই শব্দগুলি সর্বদা বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।

সুমনস্-শব্দ বহুবচনে ব্যবহৃত হলেও একবচনেও প্রয়োগ দেখা যায়। সুমনস্-শব্দ পুষ্প-অর্থে নিত্য বহুবচনান্ত, কিন্তু পণ্ডিত-অর্থে একবচনান্ত হয়।

অপ্সরস্-শব্দ সাধারণতঃ বহুবচনান্ত, কিন্তু একবচনেও ব্যবহৃত হয়, যথা- 'অস্তি মেনকেতি কাচিৎ অপ্সরাঃ'।

৪) গৌরব (আদর বা সম্মান) বোঝালে অনেক স্থলে একবচনের পরিবর্তে বহুবচন ব্যবহৃত হয়। যেমন-স্নেহভাজনেষু, অভিন্নহৃদয়েষু, হৃদয়হারিষু, শ্রীচরণকমলেষু প্রভৃতি।

৫) প্রদেশবাচক শব্দসকল প্রায়ই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা-বঙ্গেষু, উৎকলেষু, বিদর্ভেষু ইত্যাদি। কিন্তু প্রদেশবাচক শব্দসকলের সহিত দেশ, বিষয় প্রভৃতি শব্দের সমাস হলে সর্বদা একবচন হয়, যেমন-বঙ্গদেশে, উৎকলদেশে ইত্যাদি।

৬) গৃহ-শব্দ ক্লীবলিঙ্গেই ব্যবহৃত হয়, যথা-গৃহম্, গৃহে, গৃহাণি প্রভৃতি। কিন্তু গৃহ-শব্দ পুংলিঙ্গ হলে নিত্য বহুবচনান্ত হয়। যথা- ইমে তস্য গৃহাঃ। 

 

 লিঙ্গ(Gender)

পুংলিঙ্গ(Masculine)

সংস্কৃত ভাষায় শব্দের অর্থ দেখে লিঙ্গ নির্ণয় করা যায় না। দার, ভার্যা ও কলত্র-এই তিনটি শব্দেরই অর্থ যদিও স্ত্রী, তবুও সংস্কৃতে 'দার' পুংলিঙ্গ, 'ভার্যা' স্ত্রীলিঙ্গ ও 'কলত্র' ক্লীবলিঙ্গ শব্দ।

নীচে কোন্ শব্দের কী লিঙ্গ হয়-তা মনে রাখার জন্য কতকগুলি নিয়ম দেওয়া হল-

(১) ঘঞলৌ পুংসি- ঘঞ্ ও অল্ -প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল পুংলিঙ্গ। যথা, ঘঞ্-প্রত্যয়ান্ত-পাঠঃ (পঠ্+ঘঞ্), পাতঃ, বাসঃ, লাভঃ, নাশঃ, কামঃ, শোকঃ, ভোগঃ, রোগঃ, যোগঃ, পাকঃ, ত্যাগঃ, ভাগঃ, যাগঃ, হারঃ, রাগঃ, সঙ্গঃ, ভঙ্গঃ প্রভৃতি। 

অল্ বা অচ্-প্রত্যয়ান্ত- জয়(জি+অচ্), ক্ষয়ঃ, চয়ঃ, লয়ঃ, নয়ঃ, রবঃ, স্তবঃ, ভবঃ, খেদঃ, ভেদঃ, ক্লেশঃ, শ্লেষঃ, কোপঃ, তোষঃ, বোধঃ, রোষঃ, মোহঃ, দ্রোহঃ, ক্রোধঃ,লোভঃ, ক্ষোভঃ,স্পর্শঃ, হর্ষঃ, জপঃ, মদঃ, গ্রহঃ, বিজয়ঃ, বিনয়ঃ, বিস্ময়ঃ, আশ্রমঃ, আশ্রয়ঃ, পরামর্শঃ ইত্যাদি।

অল্ বা অচ্ প্রত্যয়ান্ত হলেও ভয়, মুখ, বর্ষ, পদ-এই শব্দগুলি ক্লীবলিঙ্গ হয়। এদের মধ্যে বর্ষ-শব্দ পুংলিঙ্গও হয়।

(২) ক্যন্তঃ(কি+অন্তঃ)- কি-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল পুংলিঙ্গ। যথা-বিধিঃ (বি+ধা+কি), নিধিঃ, আধিঃ, সন্ধিঃ, জলধিঃ, বারিধিঃ, পয়োধিঃ, উদধিঃ ইত্যাদি।

(৩) নঙন্তঃ(নঙ্+অন্তঃ)- নঙ্-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল পুংলিঙ্গ। যথা-প্রশ্নঃ(প্রচ্ছ+নঙ্), স্বপ্নঃ, যজ্ঞঃ, যত্নঃ ইত্যাদি।

(৪) নন্তঃ(ন্+অন্তঃ)- ন্-ভাগান্ত শব্দসকল পুংলিঙ্গ। যেমন-গুণিন্-গুণী, রাজন্-রাজা, শ্বন্-শ্বা, যুবন্-যুবা, উক্ষন্-উক্ষা, মহিমন্-মহিমা, গরিমন্-গরিমা, লঘিমন্-লঘিমা (প্রেমন্-শব্দ পুংলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গে ব্যবহৃত হয়) প্রভৃতি।

(৫) দারাক্ষতলাজাসূনাং বহুত্বঞ্চ- দার, অক্ষত, লাজ ও অসু শব্দ পুংলিঙ্গ এবং এরা সবসময় বহুবচনেই প্রযুক্ত হয়।

(৬) ণাথুচ্(ণ+অথুচ্)- ণ, অথুচ্(অথু)-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল পুংলিঙ্গ হয়, যথা- ব্যাধঃ(ব্যধ+ণ), বেপথুঃ(বেপ+অথুচ্) প্রভৃতি।

 (৭) রাত্রাহ্নাহাঃ পুংসি- সমাস করলে যে সব শব্দের শেষে রাত্র, অহ্ন বা অহ থাকে, তারা পুংলিঙ্গ, যথা-সর্বরাত্রঃ, পূর্বরাত্রঃ, মধ্যরাত্রঃ (কিন্তু রাত্রি শব্দের পূর্বে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকলে ক্লীবলিঙ্গ হয়, যথা-দ্বিরাত্রম্, ত্রিরাত্রম্, পঞ্চরাত্রম্, সপ্তরাত্রম্, নবরাত্রম্ প্রভৃতি), পূর্বাহ্ণঃ, মধ্যাহ্নঃ, অপরাহ্ণঃ, সায়াহ্নঃ, পরমাহঃ, শুভাহঃ, একাহঃ ইত্যাদি (কিন্তু পুণ্যাহম্ (পবিত্র দিন) শব্দটি ক্লীবলিঙ্গ)।

(৮) মিত্র-শব্দ সূর্য অর্থে পুংলিঙ্গ, কিন্তু বন্ধু অর্থে ক্লীবলিঙ্গ হয়।

(৯) এছাড়াও নিম্নলিখিত শব্দগুলি পুংলিঙ্গ হয়, যথা- বিদ্যালয়ঃ, মহাবিদ্যালয়ঃ, বিশ্ববিদ্যালয়ঃ, ঘটঃ, পটঃ, ধূপঃ, দীপঃ, রথঃ, অর্থঃ, সময়ঃ, কালঃ, রসঃ, বায়সঃ, বাসরঃ, দোষঃ, গুণঃ, পাষাণঃ, কুম্ভঃ, বৃষভঃ, দ্বাপরঃ, ক্ষুরঃ, মেরুঃ, তরুঃ, শত্রুঃ, সেতুঃ, হেতুঃ, কেতুঃ, স্বর্গঃ, যাগঃ, অদ্রিঃ, মেঘঃ, অব্ধিঃ, অসিঃ, শরঃ, অরিঃ, করঃ, গণ্ডঃ, ওষ্ঠঃ, দন্তঃ, কেশঃ, নখঃ, মাসঃ, ঋতুঃ, রসঃ, বর্ণঃ, অগ্নিঃ, শব্দঃ, বায়ুঃ, নরঃ, অহিঃ, ব্রহ্মা, বিষ্ণুঃ, কার্তিকেয়ঃ, বিনায়কঃ, শিবঃ, রুদ্রঃ, মহাকালঃ, সাগরঃ, সমুদ্রঃ, পর্বতঃ, খড়গঃ, রিপুঃ, কণ্ঠঃ, গলঃ, রশ্মিঃ, কিরণঃ, বৃক্ষঃ, গ্রীষ্মঃ, হেমন্তঃ, বসন্তঃ, কটুঃ, তিক্তঃ, কষায়ঃ, মধুরঃ, অম্লঃ, লবণঃ, শুক্লঃ, কৃষ্ণঃ, শ্যামঃ, ধূসরঃ, পবনঃ, সমীরঃ, সমীরণঃ, বাতঃ, অনিলঃ, মারুতঃ প্রভৃতি।


স্ত্রীলিঙ্গ(Feminine)

১) ক্তিন্নন্তঃ (ক্তিন্+অন্তঃ)- ক্তিন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল স্ত্রীলিঙ্গ হয়, যথা- নীতিঃ(নী+ক্তিন্), শ্রুতিঃ, গতিঃ, ভক্তিঃ, কৃতিঃ, শক্তিঃ, দীপ্তিঃ, মতিঃ (জ্ঞাতি-শব্দ ক্তিন্-প্রত্যয়ান্ত হলেও পুংলিঙ্গ হয়) প্রভৃতি।

২) টাপ্, ডাপ্, চাপ্ (আপ্), ঙীপ্, ঙীষ্, ঙীন্ (ঈপ্) ও ঊঙ্-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল স্ত্রীলিঙ্গ, যেমন-শোভা, অজা, দীনা, স্থিরা, দেবী, গৌরী, নদী, সিংহী, সুন্দরী, বধূঃ, শ্বশ্রূঃ প্রভৃতি।

৩) তলন্তঃ(তল্+অন্তঃ)- তল্(তা)-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল স্ত্রীলিঙ্গ, যথা-লঘুতা, পটুতা, মৃদুতা, দেবতা, সাধুতা, হীনতা, জনতা ইত্যাদি।

৪) ঊনবিংশতি(১৯) থেকে নবনবতি(৯৯) পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ হয় এবং প্রায়ই একবচনরূপে ব্যবহৃত হয়। যথা- ঊনবিংশতিঃ, বিংশতিঃ, ত্রিংশৎ, চত্বারিংশৎ, পঞ্চাশৎ, ষষ্টিঃ, সপ্ততিঃ, অশীতিঃ, নবতিঃ, নবনবতিঃ ইত্যাদি।

৫) তিথিবাচক শব্দসকল স্ত্রীলিঙ্গ। যেমন- প্রতিপৎ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা।

৬) অকারান্ত সমাহার-দ্বিগু সমাস নিষ্পন্ন শব্দসমূহ স্ত্রীলিঙ্গ হয়। যথা-ত্রিলোকী, চতুষ্পদী, চতুষ্পাঠী, পঞ্চবটী, সপ্তশতী, দশরথী (কিন্তু পাত্র, যুগ, ভুবন-শব্দ পরপদ হলে ক্লীবলিঙ্গ হয়, যথা-পঞ্চপাত্রম্, চতুর্যুগম্, ত্রিভুবনম্) প্রভৃতি।

৭) নিত্য বহুবচনান্ত অপ্, সুমনস্, সমা, সিকতা, বর্ষা-শব্দসমূহ স্ত্রীলিঙ্গ হয়।

৮) এছাড়াও ভূমিঃ, গ্লানিঃ, হানিঃ, বিদ্যুৎ, তড়িৎ, নিশা, ক্ষণপ্রভা, সৌদামিনী, রজনী, রাত্রিঃ, শর্বরী, বিভাবরী, ব্রততী, লতা, দিক্, আশা, ধরা, বসুন্ধরা, বসুধা, সর্বংসহা, অবনী, মেদিনী, পৃথিবী, মহী,  ক্ষিতিঃ, স্রোতস্বিনী, লজ্জা, ব্রীড়া, ত্রপা, আশীঃ(আশীর্বাদঃ), ধূঃ(ভার, বোঝা), পূঃ(নগর), গীঃ(বক্তৃতা), দ্বাঃ(দ্বার) শব্দগুলি স্ত্রীলিঙ্গ হয়। 


ক্লীবলিঙ্গ(Neuter)

(১) ভাবে ল্যুডন্তঃ(ল্যুট্+অন্তঃ)- ভাববাচ্যে নিষ্পন্ন ল্যুট্(অনট্)-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল ক্লীবলিঙ্গ। যথা- ভোজনম্ (ভুজ্+ল্যুট্(অনট্)), গমনম্, দর্শনম্, শ্রবণম্, রোদনম্, শয়নম্, ভ্রমণম্ প্রভৃতি।

(২) নপুংসকে ভাবে ক্তঃ- সর্বপ্রকার কালে ভাববাচ্যে ধাতুর পর ক্ত-প্রত্যয় হয় এবং সেই ক্ত-প্রত্যয়ান্ত শব্দ ক্লীবলিঙ্গ হয়। যথা- শিশোঃ শয়িতম্(শী+ক্ত), বালকস্য হসিতম্, তেন কৃতম্, জাতম্, ভুক্তম্, গীতম্, গতম্, জীবিতম্ প্রভৃতি।

(৩) শতাদিঃ ক্লীবে- শত প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দগুলি ক্লীবলিঙ্গ। যথা-শতম্, সহস্রম্, অযুতম্, লক্ষম্, নিযুতম্ ইত্যাদি।  

(৪) অসন্তো দ্ব্যচ্কঃ(অস্+অন্তঃ  দ্বি+অচ্কঃ)- দুই স্বরবিশিষ্ট অস্-ভাগান্ত শব্দ ক্লীবলিঙ্গ হয়। যথা-পয়স্-পয়ঃ, মনস্-মনঃ, চেতস্-চেতঃ, নভস্-নভঃ, তেজস্-তেজঃ, তমস্-তমঃ, শিরস্-শিরঃ, যশস্-যশঃ, বয়স্-বয়ঃ, বাসস্-বাসঃ (কিন্তু বেধস্-বেধাঃ শব্দ পুংলিঙ্গ) ইত্যাদি।

দুইয়ের বেশি স্বরযুক্ত হলে পুংলিঙ্গ হয়, যথা- চন্দ্রমস্-চন্দ্রমাঃ, সুমেধস্-সুমেধাঃ, পুরোধস্-পুরোধাঃ প্রভৃতি।

(৫) ইসুসন্তঃ(ইস্+উস্+অন্তঃ)- ইস্ ও উস্-ভাগান্ত শব্দ ক্লীবলিঙ্গ, যথা- হবিস্-হবিঃ, সর্পিস্-সর্পিঃ, জ্যোতিস্-জ্যোতিঃ, বপুস্-বপুঃ, ধনুস্-ধনুঃ, যজুস্-যজুঃ, আয়ুস্-আয়ুঃ ইত্যাদি।

(৬) মনিন্ দ্ব্যচ্কঃ(দ্বি+অচ্কঃ)- দুই স্বরবিশিষ্ট মনিন্(অন্)-প্রত্যয়ান্ত শব্দ ক্লীবলিঙ্গ, যথা-কর্মন্-কর্ম, নর্মন্-নর্ম, চর্মন্-চর্ম, ভস্মন্-ভস্ম, জন্মন্-জন্ম, বেশ্মন্-বেশ্ম, বর্ত্মন্-বর্ত্ম, বর্মন্-বর্ম, শর্মন্-শর্ম (ব্রহ্মন্-শব্দ সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা অর্থে পুংলিঙ্গ এবং নির্গুণ পরমাত্মা অর্থে ক্লীবলিঙ্গ হয়) প্রভৃতি।

দুইয়ের বেশি স্বরযুক্ত হলে পুংলিঙ্গ হয়, যথা- দেবশর্মন্-দেবশর্মা, তাত্রীবর্মন্-তাত্রীবর্মা ইত্যাদি। 

(৭) ইত্রং নপুংসকে- ইত্র-প্রত্যয়ান্ত শব্দসকল ক্লীবলিঙ্গ, যথা- পবিত্রম্(পূ+ইত্র), চরিত্রম্, খনিত্রম্ ইত্য়াদি।

(৮) ভাব অর্থে অকারান্ত তদ্ধিত-প্রত্যয়(অণ্, ষ্যঞ্, ত্ব) নিষ্পন্ন শব্দসকল ক্লীবলিঙ্গ, যথা-অণ্-লাঘবম্(লঘু+অণ্), গৌরবম্, যৌবনম্; ষ্যঞ্- তারুণ্যম্(তরুণ+ষ্যঞ্), আলস্যম্, স্বাস্থ্যম্, বাল্যম্, ধৈর্য্যম্, সৌন্দর্যম্; ত্ব-বন্ধুত্বম্, মৃদুত্বম্, চারুত্বম্ ইত্যাদি।

(৯) পুষ্প ও ফল বোঝালে বৃক্ষবাচক শব্দগুলি ক্লীবলিঙ্গ হয়, যথা-আম্রম্-আম ফল, পনসম্-কাঁঠাল ফল, নারিকেলম্-নারিকেল ফল (হরীতকী, আমলকী, দ্রাক্ষা প্রভৃতি ফলবাচক শব্দ এবং জাতী, জবা, মালতী প্রভৃতি পুষ্পবাচক শব্দ হলেও স্ত্রীলিঙ্গ হয়) প্রভৃতি। কিন্তু বৃক্ষ অর্থে পুংলিঙ্গ হয়, যথা-আম্রঃ-আমগাছ, পনসঃ-কাঁঠাল গাছ, নারিকেলঃ-নারিকেল গাছ।

(১০) ক্রিয়াব্যয়োর্বিশেষণম্- ক্রিয়ার বিশেষণ এবং অব্যয়ের বিশেষণ ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত হয়, যথা-ক্রিয়ার বিশেষণ- বালকঃ দ্রুতং গচ্ছতি। স শনৈঃ শনৈঃ লিখতি ইত্যাদি। অব্যয়ের বিশেষণ-মনোহরং প্রাতঃ, রমণীয়ং সন্ধ্যা প্রভৃতি।

(১১) অব্যয়ীভাব সমাসে নিষ্পন্ন শব্দ ক্লীবলিঙ্গ, যথা-প্রতিদিনম্, যথাশক্তি, যথেচ্ছম্, যথাসাধ্যম্, যথাজ্ঞানম্, উপগঙ্গম্, আকণ্ঠম্, নির্বিঘ্নম্, অধিতটম্, অনুরূপম্ ইত্যাদি।

(১২) সমাহার-দ্বন্দ্ব সমাস নিষ্পন্ন পদসকল ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত হয়, যথা- অহিনকুলম্, পাণিচরণম্, বধূবরম্ ইত্যাদি।

(১৩) অজহল্লিঙ্গ("ওহাক্ ত্যাগে", হা+শতৃ='জহৎ'-শব্দের অর্থ "ত্যাগ করা"। জহৎ+লিঙ্গ=জহল্লিঙ্গ। ন জহল্লিঙ্গ=অজহল্লিঙ্গ) অর্থাৎ যে শব্দ লিঙ্গ ত্যাগ করে না। সেই নিত্য ক্লীবলিঙ্গ শব্দগুলি হল- শরণম্, কারণম্, নিদানম্, প্রমাণম্, পাত্রম্, আস্পদম্, স্থানম্, পদম্, ভাজনম্, মূলম্ প্রভৃতি শব্দ যে কোনো লিঙ্গের বা যে কোনো বচনের বিশেষ্য পদকে বিশেষিত করুক না কেন, সাধারণতঃ ক্লীবলিঙ্গ ও একবচনান্ত হয়। উদাহরণ যথা-স্নেহভাজনম্ ছাত্রাঃ, শ্রদ্ধাস্পদম্ শিক্ষকাঃ ইত্যাদি।

(১৪) এছাড়াও গগনম্, অন্তরীক্ষম্, অরণ্যম্, বনম্, বিপিনম্, কাননম্, পর্ণম্, পত্রম্, ছিদ্রম্, বিবরম্, হিমম্, তুহিনম্, উদকম্, জলম্, সলিলম্, শীতম্, উষ্ণম্, মাংসম্, আমিষম্, পলম্, রুধিরম্, রক্তম্, শোণিতম্, আননম্, মুখম্, বদনম্, আস্যম্, বক্ত্রম্, অক্ষি, নয়নম্, নেত্রম্, চক্ষুঃ, ধনম্, বিত্তম্, বলম্, সামর্থ্যম্, সৈন্যম্, হলম্, লাঙ্গলম্, স্বর্ণম্, কাঞ্চনম্, তাম্রম্, লৌহম্, সুখম্, দুঃখম্, কষ্টম্, শুভম্, কল্যাণম্, মঙ্গলম্, শিবম্, ভদ্রম্, ব্যঞ্জনম্, দধি, দুগ্ধম্, ঘৃতম্, চন্দনম্, কুঙ্কুমম্ ইত্যাদি শব্দসমূহও ক্লীবলিঙ্গ হয়।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-
Helps to the Study of Sanskrit-জানকীনাথ শাস্ত্রী।
পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র-সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য


প্রশ্নপত্র(Question Paper): https://forms.gle/5kp5FbJxYibEERwF6




Tuesday, November 10, 2020

পাঠ ১- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়

বর্ণ - ভাষা বা সাহিত্যের মূল উপাদান হল বর্ণ। বর্ণের সমষ্টিকে বলে বর্ণমালা। বর্ণসমূহ দ্বিধা বিভক্ত-
(ক) স্বরবর্ণ।
(খ) ব্যঞ্জনবর্ণ।

(ক) স্বরবর্ণ- 'স্বয়ং রাজন্তে' ইতি 'স্বরাঃ'। অর্থাৎ যে বর্ণগুলির অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হয় , সেগুলিকে স্বরবর্ণ বলে। স্বরবর্ণ ১৪ টি, যথা-অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ , ঌ, , এ, ঐ, ও, ঔ।  স্বরবর্ণ তিন প্রকার, যথা-
১) হ্রস্বস্বর- অ,ই ,উ, ঋ, ঌ। হ্রস্বস্বরকে 'লঘুস্বর'-ও বলা হয়।
২) দীর্ঘস্বর-হ্রস্বস্বরের দীর্ঘ অবস্থা হল দীর্ঘস্বর,যথা- আ, ঈ, ঊ, ৠ, এ, ঐ, ও, ঔ। দীর্ঘস্বরকে 'গুরুস্বর'-ও বলা হয়।
৩) প্লুতস্বর- দীর্ঘস্বর আরও দীর্ঘতররূপে উচ্চারণ করলে প্লুত হয়। প্লুতস্বর আটটি, যথা- আ৩, ঈ৩, ঊ৩, ৠ৩, এ৩, ঐ৩, ও৩, ঔ৩। সাধারণতঃ দীর্ঘস্বরের উত্তর সংখ্যা লিখে সেই বর্ণের প্লুতত্ব বোঝানো হয়।

(খ) ব্যঞ্জনবর্ণ- যে বর্ণগুলির অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়া স্পষ্ট ও স্বতন্ত্রভাবে উচ্চারিত হয় না, সেগুলিকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন- শুদ্ধ 'ক্' বর্ণকে আমরা উচ্চারণ করতে পারি না। কিন্তু 'ক্+অ' = 'ক'- এই স্বরবর্ণ সমন্বিত(অ) ব্যঞ্জনকে(ক) আমরা উচ্চারণ করতে পারি। ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৫ টি। যথা-    

 ক-বর্গ

 ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্

 চ-বর্গ

 চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ্

 ট-বর্গ

 ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, ণ্

 ত-বর্গ

 ত্, থ্, দ্, ধ্, ন্

 প-বর্গ

 প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্

 অন্তঃস্থ বর্ণ

 য্, র্, ল্, ব্

 উষ্ম বর্ণ

 শ্, ষ্, স্, হ্

অযোগবাহ বর্ণ (যে বর্ণগুলি ভাষা ও ব্যাকরণের কেবল প্রয়োগ নির্বাহ করে)


 ং, ঃ


অক্ষর- ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত, অনুস্বার যুক্ত অথবা শুদ্ধ স্বরকেই অক্ষর বলে। "সব্যঞ্জনঃ সানুস্বারঃ শুদ্ধো বাপি স্বরোঽক্ষরম্"। 

সংস্কৃতে 'বর্ণ' ও 'অক্ষর' পর্যায় (Synonym) শব্দ রূপে ব্যবহৃত হলেও 'বর্ণ' বলতে যেমন স্বর (Vowel) ও ব্যঞ্জন (Consonant) উভয়কেই বোঝায়; 'অক্ষর' বলতে কিন্তু স্বরকেই বোঝায়। যেমন-'দুর্গা' শব্দটিতে পাঁচটি বর্ণ(Letters) আছে-দ্+উ+র্+গ্+আ। কিন্তু অক্ষর বা স্বর(Vowels) মাত্র দুটি- and । 

অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ , ঌ, ৡ- এই দশটিকে 'সমানাক্ষর' এবং এ, ঐ, ও, ঔ এই চারটিকে 'সন্ধ্যক্ষর' বলে

নীচের ছকে দেবনাগরী লিপিতে স্বর  ও ব্যঞ্জনবর্ণগুলির পরিচয় দেওয়া হল:- 

স্বরবর্ণ

 अ (অ)

  आ   (আ)

  इ

(ই)

 ई 

(ঈ) 

 उ 

(উ)

 ऊ

(ঊ) 

 ऋ

(ঋ) 

 ऋृ

()

 लृ

 ()

 लृृ

(ৡ) 


 ए 

(এ)

 ऐ

(ঐ) 

 ओ 

(ও)

 औ 

(ঔ)



 ব্যঞ্জনবর্ণ

 क

(ক)

 ख

(খ) 

 ग

(গ) 

 घ

(ঘ) 

 ङ

(ঙ) 

 च 

(চ)

 छ 

(ছ)

 ज

(জ)

 झ

(ঝ) 

 ञ

(ঞ) 

 ट

(ট) 

(ঠ) 

ड 

(ড)

(ঢ) 

ण 

(ণ)

 त 

(ত)

 थ

(থ) 

 द 

(দ)

 ध 

(ধ)

 न

(ন) 

 प

(প) 

 फ

(ফ)

 ब

(ব)

 भ

(ভ)

 म

(ম)

 य

(য)

 र

(র)

(ল) 

 व

(ব)

 श

(শ) 

 ष

 (ষ)

 स

 (স)

 ह

 (হ)

  .

( ং)

 ঃ 

( ঃ)


শব্দ- বর্ণের লিখিত রূপকে শব্দ বলা হয়। অর্থযুক্ত ধ্বনিকেও শব্দ বলা হয়। বর্ণাত্মক ও ধ্বন্যাত্মক ভেদে শব্দ দ্বিবিধ। 

প্রকৃতি-  মূল শব্দকে প্রকৃতি বলে। প্রকৃতি দুরকমের, যথা-
১) প্রাতিপদিক- অর্থবিশিষ্ট শব্দকে প্রাতিপদিক বলা হয়, যেমন-নর, ফল, মুনি ইত্যাদি।
২) ধাতু- ক্রিয়াপদের মূলকে ধাতু বলে, যেমন-ভূ, গম্ ইত্যাদি।

প্রত্যয়- প্রাতিপদিক ও ধাতুর পরে যা যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে। প্রত্যয় পাঁচ প্রকার, যথা-
১) বিভক্তি- যার দ্বারা সংখ্যা, কারক ও সম্বন্ধের বোধ হয়, তাকে বিভক্তি বলা হয়- "সংখ্যাকারকাদিবোধয়িত্রী বিভক্তিঃ"। সংস্কৃতে প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতু্র্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী -এই সাতটি বিভক্তি আছে- "বিভক্তয়ঃ সপ্ত"। সাধারণতঃ কর্তায় প্রথমা, কর্মে দ্বিতীয়া, করণে তৃতীয়া, সম্প্রদানে চতুর্থী, অপাদানে পঞ্চমী, সম্বন্ধ বা শেষে ষষ্ঠী এবং অধিকরণে সপ্তমী বিভক্তি হয়। 
প্রতি বিভক্তির তিনটি করে বচন হয়। বচন দ্বারা সংখ্যার জ্ঞান হয়, যেমন- একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন।
ক) একবচনে এক সংখ্যা, দ্বিবচনে দুই সংখ্যা বোঝায়।
খ) বহুবচনে তিন থেকে বাকী সমস্ত সংখ্যার বোধ হয়।

২) কৃৎপ্রত্যয়- ধাতুর পরে যে সকল প্রত্যয় বসে তাদেরকে কৃৎপ্রত্যয় বলে, যেমন-তব্য, অনীয়র্, ণ্যৎ, যৎ ইত্যাদি।
৩) তদ্ধিতপ্রত্যয়- শব্দের পরে যে সকল প্রত্যয় বসে তাদেরকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে, যেমন- ইঞ্, ঢক্, অঞ্ ইত্যাদি।
৪) স্ত্রীপ্রত্যয়- টাপ্, ডাপ্, চাপ্, ঙীপ্, ঙীষ্, ঙীন্ এবং ঊঙ্ -এই সাতটি প্রত্যয়কে স্ত্রীপ্রত্যয় বলে। সংস্কৃতে  এই সাতটি স্ত্রীপ্রত্যয় বিভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত হয়।
৫) ধাত্ববয়ব- তি, তস্-প্রভৃতি বিভক্তি পরে থাকলে যে সকল প্রত্যয় ভূ-প্রভৃতি ধাতুর অঙ্গরূপে প্রযুক্ত হয়, তাদেরকে ধাত্ববয়ব বলে। যেমন- 'ভবতি' -এই রূপ সিদ্ধির জন্য 'তি'-বিভক্তি পরে থাকলে 'ভূ'-ধাতুর উত্তর 'শপ্'-বিকরণের আগমে 'ভূ শপ্ তি' অবস্থায় গুণাদিকার্যে ভবতি হয়। এখানে 'শপ্'-প্রত্যয় হল ধাত্ববয়ব।

'সু' প্রভৃতি ২১ টি শব্দ বিভক্তির নাম 'সুপ্'। প্রথমার একবচনে সু ও সপ্তমীর বহুবচনের সুপ্ বিভক্তির অন্তিম বর্ণ প্-কার-কে নিয়ে নির্মিত হয় এই সুপ্ বিভক্তি । সুপ্ বিভক্তিগুলি প্রথমা থেকে সপ্তমী-এই সাত ভাগে বিভক্ত এবং এদের প্রত্যেকটির আবার একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন-এই তিন ভেদ। ফলে মোট (৭X৩) একুশটি সুপ্ বিভক্তি।

 সুপ্-বিভক্তির আকৃতি

 বিভক্তি

 একবচন

দ্বিবচন 

বহুবচন 

প্রথমা

 সু

 ঔ

জস্ 

দ্বিতীয়া

 অম্

 ঔট্

 শস্

তৃতীয়া

 টা

 ভ্যাম্

 ভিস্

চতুর্থী

 ঙে 

ভ্যাম্ 

 ভ্যস্

পঞ্চমী

 ঙসি 

 ভ্যাম্

 ভ্যস্

ষষ্ঠী

 ঙস্

 ওস্

 আম্

সপ্তমী

 ঙি

 ওস্

 সুপ্

* অর্থবোধক শব্দের শেষে সুপ্ অর্থাৎ সু, ঔ, জস্ যুক্ত হলে তাকে সুবন্ত পদ বা নাম বলে।


তি, তস্ প্রভৃতি ১৮০ টি ধাতু বিভক্তির নাম 'তিঙ্'। পাণিনি মতে, "তিপ্, তস্, ঝি, সিপ্, থস্, থ, মিপ্, বস্, মস্, ত, আতাম্, ঝ, থাস্, আথাম্, ধ্বম্, ইট্, বহিঙ্, মহিঙ্"-এই ১৮টি বিভক্তি-ই তিঙ্-বিভক্তি। 'তিপ্'-এর আদি 'তি' ও আত্মনেপদের শেষ বিভক্তি 'মহিঙ্'-এর অন্ত্য 'ঙ'-পর্যন্ত সবগুলি প্রত্যয়কে প্রত্যাহার করে 'তিঙ্' বলে।

তিঙ্ বিভক্তির আকৃতি

পরস্মৈপদ

 

আত্মনেপদ

 

প্রথম পুরুষ

মধ্যম পুরুষ

উত্তম পুরুষ

 

প্রথম পুরুষ

মধ্যম পুরুষ

উত্তম পুরুষ

লট্(বর্তমান কাল)-Present Tense

একবচন

তি

সি

মিপ্

 

তে

সে

দ্বিবচন

তস্

থস্

বস্

 

আতে

আথে

বহে

বহুবচন

অন্তি

মস্

 

অন্তে

ধ্বে

মহে

লোট্(আদেশ, অনুজ্ঞা)-Imperative

একবচন

তু

হি

আনি

 

তাম্

স্ব

দ্বিবচন

তাম্

তম্

আব

 

আতাম্

আথাম্

আবহৈ

বহুবচন

অন্তু

আম

 

অন্তাম্

ধ্বম্

আমহৈ

লঙ্(অতীত কাল)-Past Tense

একবচন

অম্

 

থাস্

দ্বিবচন

তাম্

তম্

 

আতাম্

আথাম্

বহি

বহুবচন

অন্

 

অন্ত

ধ্বম্

মহি

বিধিলিঙ্ (বিধি, ঔচিত্য, নিমন্ত্রণ প্রভৃতি ) Potentival

একবচন

যাৎ

যাস্

যাম্

 

ঈত

ঈথাস্

ঈয়

দ্বিবচন

যাতাম্

যাতম্

যাব

 

ঈয়াতাম্

ঈয়াথাম্

ঈবহি

বহুবচন

যুস্

যাত

যাম

 

ঈরন্

ঈধ্বম্

ঈমহি

লৃট্(ভবিষ্যৎ কাল)-Future Tense

একবচন

স্যতি

স্যসি

স্যামি

 

স্যতে

স্যসে

স্যে

দ্বিবচন

স্যতস্

স্যথস্

স্যাবস্

 

স্যেতে

স্যেথে

স্যাবহে

বহুবচন

স্যন্তি

স্যথ

স্যামস্

 

স্যন্তে

স্যধ্বে

স্যামহে

লুঙ্(সাধারণ ও অদ্যতন অতীত)-Aorist

একবচন

দ্

স্

অম্

 

থাস্

দ্বিবচন

তাম্

তম্

 

আতাম্

আথাম্

বহি

বহুবচন

অন্

 

অন্ত

ধ্বম্

মহি

লিট্(পরোক্ষ অতীত)-Perfect

একবচন

অ (ণল্)

থ(থল্)

অ(ণল্)

 

সে

দ্বিবচন

অতুস্

অথুস্

 

আতে

আথে

বহে

বহুবচন

উস্

 

ইরে

ধ্বে

মহে

লৃঙ্(অনিষ্পত্তিতে, যদি অর্থে)Conditional, Subjunctive

একবচন

স্যাৎ

স্যস্

স্যম্

 

স্যত

স্যথাস্

স্যে

দ্বিবচন

স্যাতাম্

স্যতম্

স্যাব

 

স্যেতাম্

স্যেথাম্

স্যাবহি

বহুবচন

স্যন্

স্যত

স্যাম

 

স্যন্ত

স্যধ্বম্

স্যামহি

লুট্(শ্বস্তন ভবিষ্যৎ)-Periphrastic Future

একবচন

তা

তাসি

তাস্মি

 

তা

তাসে

তাহে

দ্বিবচন

তারৌ

তাস্থস্

তাস্বস্

 

তারৌ

তাসাথে

তাস্বহে

বহুবচন

তারস্

তাস্থ

তাস্মস্

 

তারস্

তাধ্বে

তাস্মহে

আশীর্লিঙ্(আশীর্বাদার্থে ভবিষ্যৎ)-Benedictive

একবচন

যাৎ

যাস্

যাসম্

 

সীষ্ট

সীষ্ঠাস্

সীয়

দ্বিবচন

যাস্তাম্

যাস্তম্

যাস্ব

 

সীয়াস্তাম্

সীয়াস্থাম্

সীবহি

বহুবচন

যাস্ত

যাস্ত

যাস্ম

 

সীরন্

সীধ্বন্

সীমহি

*ধাতুর উত্তর তি, তস্, অন্তি প্রভৃতি প্রত্যয় যোগ করে তিঙন্ত পদ বা ক্রিয়াপদ হয়। সংস্কৃত ভাষার ধাতুগুলির মধ্যে কতকগুলি কেবল পরস্মৈপদী, কতকগুলি কেবল আত্মনেপদী, আবার কতকগুলি উভয়পদী। উভয়পদী ধাতুর উত্তর আত্মার্থে আত্মনেপদ এবং পরার্থে পরস্মৈপদ হয়।


পদ- সুপ্ যুক্ত শব্দ ও তিঙ্ যুক্ত ধাতুর নাম পদ। "সুপ্তিঙন্তং পদম্"।   এই 'সুপ্' ও 'তিঙ্' যুক্ত হলে অর্থাৎ শব্দ বা ধাতুর অন্তে কোনো বিভক্তি যোগ করলে 'পদ' উৎপন্ন হয়। যেমন- 'রাম' একটি শব্দ। 'রাম' -শব্দে তৃতীয়ার একবচনে 'টা' বিভক্তি যোগ করলে 'রামেণ', সপ্তমীর বহুবচনে 'সু' বিভক্তি যোগ করলে  'রামেষু' হয়। 'ভূ' একটি ধাতু। ভূ-ধাতুতে 'লট্ তি' যোগ করলে 'ভবতি' হয়, আবার 'লৃট্ স্যতি' যোগ করলে হয় 'ভবিষ্যতি'। এই 'রামেণ',  'রামেষু', 'ভবতি', 'ভবিষ্যতি' হল এক একটি পদ।

শাস্ত্রে(সংস্কৃত ভাষায়) অপদ(যা পদ নয়) তা প্রয়োগ করতে নেই। "নাপদং(ন অপদম্) শাস্ত্রে প্রযুঞ্জীত"। সংস্কৃতে কিছু লেখার সময় পদের প্রয়োগ করতে হয়। শুধু গুণিন্, বিদ্বস্, ভূ, গম্ -এরূপ লেখা চলে না। যে কোনো বিভক্তি যোগ করে লিখতে হয়। 

এই পদ পাঁচপ্রকার, যথা-

১) বিশেষ্য- যার সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে কিছু বলা হয়, তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন-দেবদত্তঃ, সূূর্যঃ, চন্দ্রঃ, গমনম্, শয়নম্ ইত্যাদি।
২) বিশেষণ- বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ ইত্যাদি যে সকল শব্দ দ্বারা বোঝায় তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন-মূর্খ, সুন্দর, রমণীয় ইত্যাদি।
সংস্কৃতে বিশেষ্যের যে লিঙ্গ, যে বচন ও যে বিভক্তি হয় বিশেষণেরও সেই লিঙ্গ, সেই বচন এবং সেই বিভক্তি হবে-
"বিশেষ্যস্য হি যল্লিঙ্গং বিভক্তিবচনে চ যে।
তানি সর্বাণি যোজ্যানি বিশেষণপদেষ্বপি।।"
যথা-পুরাতনং পুস্তকম্, পুরাতনে পুস্তকে, পুরাতনানি পুস্তকানি।
৩) সর্বনাম- বিশেষ্যের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলা হয়, যেমন- অস্মদ্(আমি),যুষ্মদ্(তুমি), তদ্(সে)ইত্যাদি।
৪) অব্যয়- যে শব্দগুলি সকল লিঙ্গ, সকল বিভক্তি ও সকল বচনে একরকম থাকে, কোনো পরিবর্তন হয় না, সেগুলিকে অব্যয় পদ বলে। যথা- প্রাতঃ, দিবা, সম্যক্, নক্তম্, সায়ম্ ইত্যাদি।
"সদৃশং ত্রিষু লিঙ্গেষু সর্বাসু চ বিভক্তিষু।
বচনেষু চ সর্বেষু যন্ন ব্যেতি তদব্যয়ম্।।"

(# যন্ন =যৎ+ন,  # ব্যেতি= বি+এতি=বিবিধতাং প্রাপ্ণোতি।)

এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, অব্যয়ের বিশেষণ ক্লীবলিঙ্গ হয়, যথা- প্রাতঃ(সকাল)-এই অব্যয়ের বিশেষণ ক্লীবলিঙ্গে রমণীয়ম্ হবে অর্থাৎ রমণীয়ম্ প্রাতঃ(সুন্দর সকাল) –এরূপ প্রয়োগ হয়।

৫) ক্রিয়াপদ- যে পদের দ্বারা কোনো কিছু করা, হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন-গচ্ছতি(যাচ্ছে), ধাবতি(দৌড়াচ্ছে) ইত্যাদি ক্রিয়াপদ। 


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-
Helps to the Study of Sanskrit-জানকীনাথ শাস্ত্রী।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য।
পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র-সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
ব্যাকরণ কণিকা-স্বামী অমলানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়।
 


প্রশ্নপত্র (Question Paper):  https://forms.gle/85arEmn1syk9ibrF9