Thursday, December 31, 2020

পাঠ ৫- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়

 বর্ণ-বিশ্লেষণ

(১) সংযুক্তবর্ণসকল পর পর পৃথক্ পৃথক্ উল্লেখ করার নাম বর্ণ-বিশ্লেষণ

(২) প্রত্যেক ব্যঞ্জনবর্ণেই হসন্ত-চিহ্ন থাকে, পরে স্বরবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ঐ হসন্ত-চিহ্ন লুপ্ত হয়।

(৩) ব্যঞ্জনবর্ণের অব্যবহিত পূর্বে র্ থাকলে তা রেফ হয়ে পরবর্ণের মস্তকে যায়, আর ব্যঞ্জনবর্ণের অব্যবহিত পরে র্ থাকলে তা র-ফলা হয়ে পূর্ববর্ণের নিম্নে যুক্ত হয়।

(৪) অনুস্বার এবং বিসর্গের সংগে কোনো পরবর্তী স্বরবর্ণ যুক্ত হয় না।

(৫) শব্দশেষে হসন্ত-চিহ্নযুক্ত বর্ণ থাকলে তার সংগে কোনো স্বরবর্ণ যুক্ত হয় না।

বর্ণ-বিশ্লেষণের উদাহরণ, যথা- 

সরস্বতী=স্+অ+র্+অ+স্+ব্+অ+ত্+ঈ।

নক্ষত্র=ন্+অ+ক্+ষ্+অ+ত্+র্+অ।

ব্রহ্মা= ব্+র্+অ+হ্+ম্+আ।


সন্ধি

দুই বা ততোধিক বর্ণের অতি নিকটবর্তী হওয়াকে সংহিতা বা সন্ধি বলে।

সন্ধিকার্য- সন্ধি হলে কখনও কখনও বর্ণব্যত্যয়(বর্ণপরিবর্তন) হয়। এই বর্ণব্যত্যয়কে সন্ধিকার্য বলে। উদাহরণ যথা- যদি+অপি=যদ্য্+অপি। সাধারণতঃ সবাই এই সন্ধিকার্যকেই সন্ধি বলে।
অর্থাৎ সংহিতা(Closeness)+বর্ণব্যত্যয়(Change)=সন্ধি (Sandhi/Sandhikārya)

(১) ম্+অ=ম -এখানে বর্ণ দুটির মধ্যে সংহিতা(Closeness)হয়েছে, কিন্তু বর্ণের কোনো পরিবর্তন(Change) হয় নি। তাই এটিকে সন্ধি বলা যায় না।

(২) যদি+অপি=যদ্যপি। যদ্ ই+অ পি=যদ্ য্+অ পি=যদ্যপি। -এখানে সংহিতা-র সাথে সাথে বর্ণের পরিবর্তনও হয়েছে(ই-কারের স্থানে য্-কার হয়েছে)। তাই এটিকে সন্ধি বলা হয়।

সন্ধি তিন প্রকার-

(ক) স্বরসন্ধি।

(খ) ব্যঞ্জনসন্ধি।

(গ) বিসর্গসন্ধি।


স্বরসন্ধি

স্বরবর্ণে স্বরবর্ণে যে সন্ধি হয়, তাকে স্বরসন্ধি বলে।

(১) অ/আ+অ/আ=আ।

শশ+অঙ্কঃ=শশাঙ্কঃ। বিদ্যা+আলয়ঃ=বিদ্যালয়ঃ।

(২) ই/ঈ+ই/ঈ=ঈ।

গিরি+ইন্দ্রঃ=গিরীন্দ্রঃ। ক্ষিতি+ঈশঃ=ক্ষিতীশঃ।

(৩) উ/ঊ+উ/ঊ=ঊ।

বিধু+উদয়ঃ=বিধূদয়ঃ। বধূ+উৎসবঃ= বধূৎসবঃ। লঘু+ঊর্মিঃ= লঘূর্মিঃ।

(৪) ঋ+ঋ=ৠ(দীর্ঘ ঋ-কার)।

পিতৃ+ঋণম্= পিতৄণম্।

(৫) অ/ আ+ই/ঈ= এ।

দেব+ইন্দ্রঃ= দেবেন্দ্রঃ। গণ+ঈশঃ= গণেশঃ। রমা+ঈশঃ= রমেশঃ।

(৬) অ/আ+উ/ঊ= ও।

নীল+উৎপলম্= নীলোৎপলম্। গঙ্গা+উদকম্= গঙ্গোদকম্। নব+ ঊঢ়া= নবোঢ়া।

(৭) অ/আ+ঋ= অর্।

দেব+ঋষিঃ= দেবর্ষিঃ। মহা+ঋষিঃ= মহর্ষিঃ।

(৮) অ/আ+এ/ঐ= ঐ।

অদ্য+এব= অদ্যৈব। তথা+এব= তথৈব।

(৯) অ/আ+ও/ঔ= ঔ।

বন+ওষধিঃ= বনৌষধিঃ। মহা+ওষধিঃ= মহৌষধিঃ। চিত্ত+ঔদার্যম্= চিত্তৌদার্যম্।

(১০) ই, ঈ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে ই, ঈ স্থানে য্ হয়।

যদি+অপি= যদ্যপি। অতি+আচারঃ= অত্যাচারঃ। দেবী+আগচ্ছতি= দেব্যাগচ্ছতি।

(১১) উ, ঊ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে উ, ঊ স্থানে ব্ হয়।

সু+আগতম্= স্বাগতম্। সরযূ+অম্বু= সরয্বম্বু

(১২) ঋ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে ঋ স্থানে অর্ হয়।

মাতৃ+আদেশঃ= মাত্রাদেশঃ। পিতৃ+ইচ্ছা= পিত্রিচ্ছা।

(১৩) স্বরবর্ণ পরে থাকলে এ-কার স্থানে অয়্, ঐ-কার স্থানে আয়্, ও-কার স্থানে অব্, ঔ-কার স্থানে আব্ হয়।

শে+অনম্= শয়নম্।  বিনৈ+অকঃ= বিনায়কঃ। পো+অনঃ= পবনঃ। ভৌ+অকঃ= ভাবুকঃ।

(১৪) পদের অন্তস্থিত এ-কার কিংবা ও-কারের পর অকার থাকলে তা লোপ হয়। লোপ হলে অকারের যে চিহ্ন থাকে তাকে লুপ্ত অ-কার() বলে।

গৃহে+অস্মিন্= গৃহেঽস্মিন্। প্রভো+ অনুগৃহাণ= প্রভোঽনুগৃহাণ।


ব্যঞ্জনসন্ধি

ব্যঞ্জনবর্ণে স্বরবর্ণে বা ব্যঞ্জনবর্ণে ব্যঞ্জনবর্ণে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।

(১) চ্ বা ছ্ পরে থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে চ্ হয়।

সৎ+চরিত্রম্= সচ্চরিত্রম্। এতদ্+ছায়া= এতচ্ছায়া।

(২) জ্ বা ঝ্ পরে থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে জ্ হয়।

উৎ+জ্বলঃ= উজ্জ্বলঃ। তদ্+জন্ম= তজ্জন্ম

(৩) জ্ বা ঝ্ পরে থাকলে ন্ স্থানে ঞ্ হয়।

ভবান্+জীবতু= ভবাঞ্জীবতু। গচ্ছন্+ঝটিতি= গচ্ছঞ্ঝটিতি।

(৪) পদের অন্তস্থিত ত্-কার বা দ্-কারের পর শ্ থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে চ্ এবং শ্ স্থানে ছ্ হয়। 

তৎ+শৃণোতি= তচ্ছৃণোতি। তদ্+শরীরম্= তচ্ছরীরম্।

(৫) পদের অন্তস্থিত ন্-কারের পর শ্ থাকলে ন্-স্থানে ঞ্ এবং শ্ স্থানে ছ্ হয়।

ধাবন্+শশঃ= ধাবঞ্ছশঃ। মহান্+শব্দঃ= মহাঞ্ছব্দঃ।

(৬) পদের অন্তস্থিত ত্-কার বা দ্-কারের পর হ্ থাকলে ত্, দ্ স্থানে দ্ এবং হ্ স্থানে ধ্ হয়।

উৎ+হতঃ= উদ্ধতঃ।  বিপদ্+হেতুঃ= বিপদ্ধেতুঃ।

(৭) চ -বর্গের পর ন্ থাকলে ন্ স্থানে ঞ্ হয়।

যাচ্+না= যাচ্ঞা। যজ্+নঃ= যজ্ঞঃ। রাজ্+নী= রাজ্ঞী।

(৮) ট্ বা ঠ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী ত্ ও দ্ স্থানে ট্ হয়।

মহৎ+টঙ্কনম্= মহট্টঙ্কনম্। তদ্+টীকা= তট্টীকা।

(৯) ড্ বা ঢ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী ত্ ও দ্ স্থানে ড্ হয়।

উৎ+ডীনঃ= উড্ডীনঃ। এতদ্+ঢক্কা= এতড্ঢক্কা।

(১০) ষ্-কারের পরস্থিত ত্ স্থানে ট্ ও থ্ স্থানে ঠ্ হয়।

আকৃষ্+তঃ= আকৃষ্টঃ। ষষ্+থঃ= ষষ্ঠঃ।

(১১) ল্ পরে থাকলে ত্, দ্ ও ন্ স্থানে ল্ হয়। এবং ন্-স্থানে যে 'ল্' হয়, তা অনুনাসিক হয়।

উৎ+লিখিতঃ= উল্লিখিতঃ। তদ্+লীলায়িতম্= তল্লীলায়িতম্। মহান্+লাভঃ= মহাল্ঁলাভঃ।    বিদ্বান্+লিখতি= বিদ্বাল্ঁ লিখতি।

(১২) স্বরবর্ণ পরে থাকলে পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরের পরস্থিত পদান্তস্থ ন্-কার দ্বিত্ব হয়।

হসন্+আগতঃ= হসন্নাগতঃ। ধাবন্+অশ্বঃ= ধাবন্নশ্বঃ।

(১৩) ঐ ন্ দীর্ঘস্বরের পর থাকলে ন্-কারের দ্বিত্ব হয় না, কেবল পরবর্ণেই যুক্ত হয়।

মহান্+অনুগ্রহঃ= মহাননুুগ্রহঃ। কবীন্+আহ্বয়= কবীনাহ্বয়।

(১৪)  চ্ বা ছ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ন্-স্থানে অনুস্বার হয় এবং চ্ ও ছ্ স্থানে যথাক্রমে শ্চ্ ও শ্ছ্ হয়।

হসন্+চলতি= হসংশ্চলতি। ধাবন্+ছাগঃ= ধাবংশ্ছাগঃ।

(১৫) ট্ বা ঠ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ন্-স্থানে অনুস্বার হয় এবং ট্ ও ঠ্ স্থানে যথাক্রমে ষ্ট্ ও ষ্ঠ্ হয়।

মহান্+টঙ্কারঃ= মহাংষ্টঙ্কারঃ। হসন্+ঠক্কুরঃ= হসংষ্ঠক্কুরঃ।

(১৬)  ত্ বা থ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ন্-স্থানে অনুস্বার হয় এবং ত্ ও থ্-স্থানে যথাক্রমে ন্ত্ ও স্থ্ হয়।

পতন্+তরুঃ= পতংস্তরুঃ। মহান্+স্থুৎকারঃ= মহাংস্থুৎকারঃ।

(১৭) শ্ , স্ বা হ্ পরে থাকলে পদমধ্যস্থিত ন্ ও ম্-স্থানে অনুস্বার হয়।

মীমান্+সতে= মীমাংসতে। রম্+স্যতে= রংস্যতে।

(১৮) যে বর্গের বর্ণ পরে থাকে, পদমধ্যস্থিত ন্-স্থানে সেই বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়।

আশন্+কতে= আশঙ্কতে। বন্+চয়তি= বঞ্চয়তি।

(১৯) ত্ পরে থাকলে পদমধ্যস্থিত ম্-স্থানে ন্ হয়।

গম্+তা= গন্তা। শাম্+তঃ= শান্তঃ।  

(২০) স্পর্শবর্ণ(ক-ম পর্যন্ত ২৫টি বর্ণ) পরে থাকলে পদের  অন্তস্থিত ম্-স্থানে অনুস্বার হয় অথবা যে বর্গের বর্ণ পরে থাকে, বিকল্পে সেই বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়।

কিম্+করোষি= কিং করোষি, কিঙ্করোষি। দেবম্+নমতি = দেবং নমতি, দেবন্নমতি। নদীম্+তরতি= নদীং তরতি, নদীন্তরতি।

(২১) ছ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরের পর চ্-র আগম হয় এবং চ্ ও ছ্ মিলিয়া চ্ছ্ হয়।

পরি+ছদঃ= পরিচ্ছদঃ। বি+ছেদঃ= বিচ্ছেদঃ। পূর্ণ+ছেদঃ= পূর্ণচ্ছেদঃ।

(২২) ছ্ পরে থাকলে পূর্ববর্তী দীর্ঘস্বরের পর বিকল্পে চ্-র আগম হয়।

লতা+ছায়া= লতাচ্ছায়া, লতাছায়া। লক্ষ্মী+ছায়া= লক্ষ্মীচ্ছায়া, লক্ষ্মীছায়া।

(২৩) স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ বর্ণ বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ক্-স্থানে গ্, চ্-স্থানে জ্, ট্-স্থানে ড্ এবং প্-স্থানে ব্ হয়।

দিক্+অন্তঃ= দিগন্তঃ। দিক্+গজঃ= দিগ্গজঃ। দিক্+ভাগঃ= দিগ্ভাগঃ। সম্যক্+বদতি= সম্যগ্বদতি। দিক্+হস্তী= দিগ্হস্তী।

(২৪) স্বরবর্ণ বা গ্ ঘ্ দ্ ধ্ ব্ ভ্ য্ র্ ব্ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ত্-স্থানে দ্ হয়।

জগৎ+ঈশঃ= জগদীশঃ। বৃহৎ+গহনম্= বৃহদ্গহনম্। জগৎ+বন্ধুঃ= জগদ্বন্ধুঃ। উৎ+যোগঃ= উদ্যোগঃ। মহৎ+বনম্= মহদ্বনম্।


বিসর্গসন্ধি

বিসর্গের সঙ্গে স্বর বা ব্যঞ্জনবর্ণের যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। বিসর্গ দু-প্রকার-স্-জাতর্-জাত। স্-স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে স্-জাত(পয়স্>পয়ঃ); র্-স্থানে যে বিসর্গ হয়, তাকে র্-জাত(প্রাতর্> প্রাতঃ)বিসর্গ বলে।

(১) চ্ বা ছ্ পরে থাকলে, স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গস্থানেই শ্ হয়।

পূর্ণঃ+চন্দ্রঃ= পূর্ণশ্চন্দ্রঃ। শিরঃ+ছেদঃ= শিরশ্ছেদঃ।

(২) ট্ বা ঠ্ পরে থাকলে, স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গস্থানেই ষ্ হয়।

ধনুঃ+টঙ্কারঃ= ধনুষ্টঙ্কারঃ। স্থিরঃ+ঠক্কুরঃ= স্থিরষ্ঠক্কুরঃ।

(৩) ত্ বা থ্ পরে থাকলে, স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গস্থানেই স্ হয়।

উন্নতঃ+তরুঃ= উন্নতস্তরুঃ। ক্ষিপ্তঃ+থুৎকারঃ= ক্ষিপ্তস্থুৎকারঃ।

(৪) অ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গের পর অ থাকলে, পূর্ব অ-কার এবং বিসর্গ উভয় স্থানে   ও-কার হয়। ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং পরের অ-কারের লোপ হয়, লুপ্ত অ-কারের চিহ্ন() থাকে।

প্রথমঃ+অধ্যায়ঃ= প্রথমোঽধ্যায়ঃ। নরঃ+অয়ম্= নরোঽয়ম্।

(৫) বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ  বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে, অ-কার ও আ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গ উভয়ে মিলে  ও-কার হয়।  ঐ ও-কার আগের বর্ণে যুক্ত হয়।

নরঃ+গচ্ছতি= নরো গচ্ছতি। পূর্ণঃ+ঘটঃ= পূর্ণো ঘটঃ। সদ্যঃ+জাতঃ= সদ্যো জাতঃ। মনঃ+যোগঃ= মনোযোগঃ।

(৬) স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ  বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে, অ-কার ও আ-কার ভিন্ন স্বরবর্ণের পরের  স্-জাত ও র্-জাত উভয়বিধ বিসর্গ স্থানে র্ হয়।

গতিঃ+ইয়ম্= গতিরিয়ম্। রবেঃ+উদয়ঃ= রবেরুদয়ঃ। নিঃ+ভয়ঃ= নির্ভয়ঃ। বহিঃ+যোগঃ= বহির্যোগঃ। হবিঃ+ঘ্রাণম্= হবির্ঘ্রাণম্।

(৭)  স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ  বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে, অ-কার ও আ-কারের পরস্থিত র্-জাত  বিসর্গস্থানে র্ হয়।

পুনঃ+অপি= পুনরপি। প্রাতঃ+ভ্রমণম্= প্রাতর্ভ্রমণম্। দুহিতঃ+যাহি= দুহিতর্যাহি।

(৮) র্-কার পরে থাকলে র্-জাত ও স্-জাত বিসর্গস্থানে যে র্-কার হয়, তার লোপ হয় এবং পূর্বের স্বর হ্রস্ব থাকলে দীর্ঘ হয় অর্থাৎ অ, ই, উ স্থানে যথাক্রমে আ, ঈ, ঊ হয়।

পিতঃ+রক্ষ= পিতারক্ষ। নিঃ+রসঃ= নীরসঃ। বিধুঃ+রাজতে= বিধূরাজতে।

(৯) স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ বা য্ র্ ল্ ব্ হ্ পরে থাকলে আ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গের লোপ হয়। বিসর্গ লোপের পর আর সন্ধি হয় না।

অশ্বাঃ+অমী= অশ্বা অমী। হতাঃ+গজাঃ= হতা গজাঃ। কৃতাঃ+ঘটাঃ= কৃতা ঘটাঃ। অতীতাঃ+মাসাঃ= অতীতা মাসাঃ। এতাঃ+লতাঃ= এতা লতাঃ। বালকাঃ+হসন্তি= বালকা হসন্তি।

(১০) অ-কার ভিন্ন যে কোনো স্বরবর্ণ অথবা যে কোনো ব্যঞ্জনবর্ণ পরে থাকলে 'সঃ' ও 'এষঃ' -এই দুটি পদের স্-জাত বিসর্গের লোপ হয়। বিসর্গের লোপের পর আর সন্ধি হয় না।

সঃ+আগতঃ= স আগতঃ। এষঃ+আগচ্ছতি= এষ আগচ্ছতি। এষঃ+বালকঃ= এষ বালকঃ।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-

পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
ব্যাকরণ কণিকা-স্বামী অমলানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য।

প্রশ্নপত্র (Question Paper): https://forms.gle/TK3gxTJuQRnxaJWAA



Friday, December 4, 2020

পাঠ ৪- প্রাথমিক সংস্কৃত পরিচয়


উদ্দেশ্য ও বিধেয়(Subject & Predicate)

(১) একটি সামগ্রিক বাক্যে যার উদ্দেশ্যে কোনো বিবরণ দেওয়া হয় তা উদ্দেশ্য এবং ঐ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যে বিবরণ দিলে বাক্যার্থের পরিসমাপ্তি ঘটে তা বিধেয়। যেমন-শিশুঃ হসতি। এখানে শিশুঃ উদ্দেশ্য এবং হসতি বিধেয়। সাধারণতঃ কর্তৃবাচ্যের বাক্যে 'কর্তা' তার বিশেষণাদি, কর্মবাচ্যের বাক্যে 'কর্ম' উদ্দেশ্য হয় এবং বিধেয় হয় 'ক্রিয়া' অথবা যেখানে ক্রিয়া ঊহ্য থাকে সেখানে 'বিশেষণ'। উদ্দেশ্যে ও বিধেয়ে বিভক্তি সাধারণতঃ সমান থাকে, যথা-  ছাত্রাঃ পঠন্তি। অজহল্লিঙ্গ(যে শব্দের লিঙ্গ নিত্য) শব্দের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের লিঙ্গ বচনের ব্যতিক্রম হয়, যথা- উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্। বিদ্যা রূপং কুরূপাণাম্। (এগুলিতে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদে লিঙ্গের পার্থক্য)। বেদাঃ প্রমাণম্। গুণাঃ পূজাস্থানং গুণিষু। শিক্ষকাস্তে পূজাস্পদম্(বচনের পার্থক্য)।

উদ্দেশ্যে চ বিধেয়ে চ বিভক্তিস্তু সমা ভবেৎ।
কদাচিজ্ জায়তে তত্র বৈষম্যং লিঙ্গ-সংখ্যয়োঃ।।

(২) উদ্দেশ্যে ও বিধেয়ের মধ্যে প্রকৃতি ও বিকৃতি ভাব থাকলে উদ্দেশ্যের যে বচন, ক্রিয়ারও সেই বচন হয়। উদাহরণ যথা- সুবর্ণং কুণ্ডলানি ভবতি। এখানে 'সুবর্ণম্' প্রকৃতি ও 'কুণ্ডলানি' বিকৃতি। প্রকৃতি 'সুবর্ণম্' একবচনান্ত বলে ক্রিয়া একবচনান্ত হল।

বিশেষ্য ও বিশেষণ সমন্বয়

(১) দুই বা তার বেশি বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ যদি একই বিশেষণের সঙ্গে যুক্ত হয় তবে সাধারণতঃ বিশেষণের বচন বিশেষ্য বা সর্বনামের বচনের সমষ্টিদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যথা- নিদ্রা ভয়ঞ্চ সর্বেষাং সাধারণে। কিন্তু 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী'- এরূপও প্রয়োগ দেখা যায়।

(২) পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বিশেষ্যের সাধারণ বিশেষণটি পুংলিঙ্গ হয়। যথা- পিতা মাতা চ অস্মাকং পূজনীয়ৌ

(৩) ক্লীবলিঙ্গের সংগে পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ অথবা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বিশেষ্যের সাধারণ বিশেষণটি ক্লীবলিঙ্গ এবং বিকল্পে একবচনও হতে পারে(পক্ষে বিশেষ্যের বচনের সমষ্টি অনুসারে বচন হবে)। যথা- বৃক্ষাঃ লতাঃ পুষ্পাণি চ সুন্দরাণি দৃশ্যন্তে। বৃথাবাক্যং পরনিন্দা চ পরিত্যাজ্যম্(পরিত্যাজ্যে বা)।

(৪) একটি সামগ্রিক বাক্যের বিভিন্ন লিঙ্গের বিশেষ্যসমূহের মধ্যে বিশেষণটি সাধারণতঃ তার নিকটবর্তী বিশেষ্যের লিঙ্গ ও বচন গ্রহণ করে। যথা- 'যস্য বীর্যেণ কৃতিনঃ বয়ং চ ভুবনানি চ'। -এখানে 'কৃতিনঃ' বিশেষণটি নিকটবর্তী বিশেষ্য 'বয়ম্' পদের লিঙ্গ ও বচন গ্রহণ করেছে,  বিশেষ্য 'ভুবনানি' পদের নয়।

কর্তা ও ক্রিয়ার সমন্বয়

(১) অস্মদ্ অর্থাৎ অহম্, আবাম্ বা বয়ম্ কর্তা হলে ক্রিয়ায় উত্তম পুরুষের বিভক্তি হয়। যুষ্মদ্ অর্থাৎ ত্বম্, যুবাম্ বা যূয়ম্ কর্তা হলে ক্রিয়ার মধ্যম পুরুষের বিভক্তি হয়। অস্মদ্ ও যুষ্মদ্ ভিন্ন অর্থাৎ সঃ, তৌ, তে, নরঃ, নরৌ, নরাঃ ইত্যাদি কর্তা হলে ক্রিয়ায় প্রথম পুরুষের বিভক্তি হয়। যথা- অহং গচ্ছামি, ত্বং গচ্ছসি, স গচ্ছতি।

(২) কর্তায় প্রথমার একবচন থাকলে ক্রিয়াতে একবচনের বিভক্তি হয়, কর্তায় প্রথমার দ্বিবচন থাকলে ক্রিয়াতেও দ্বিবচনের বিভক্তি হয় এবং কর্তায় প্রথমার বহুবচন থাকলে ক্রিয়াতেও বহুবচনের বিভক্তি হয়। যথা-অহং করোমি, আবাং কুর্বঃ, বয়ং কুর্মঃ, শিশবঃ খেলন্তি। 

(৩) যদি একই ক্রিয়ার দুই বা বহু কর্তা থাকে, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্তার বচন ধরে সমুদায়ে যে বচন হয়, ক্রিয়ারও সেই বচন হয়। অর্থাৎ ক্রিয়ার বচন কর্তৃপদসমূহের সমষ্টিদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। যথা- অশ্বৌ গজশ্চ গচ্ছন্তি, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ সোমদত্তশ্চ গচ্ছন্তি, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তশ্চ গচ্ছতঃ।

(৪) একবচনে অনেকগুলি কর্তা থাকলে, ক্রিয়া একবচনও হয়, যথা- দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ সোমদত্তশ্চ গচ্ছতি, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তশ্চ গচ্ছতি।

(৫) কখনও আবার নিকটবর্তী কর্তা-অনুসারে ক্রিয়া হয়, যথা- "অহশ্চ রাত্রিশ্চ উভে চ সন্ধ্যে ধর্মোঽপি  জানাতি নরস্য বৃত্তম্"।

(৬) যদি একই ক্রিয়ার কর্তা প্রথম ও উত্তম পুরুষের বা মধ্যম ও উত্তম পুরুষের অথবা প্রথম, মধ্যম ও উত্তম পুরুষের হয়, সেক্ষেত্রে ক্রিয়াপদটি উত্তম পুরুষের হয়। যথা-দেবদত্তঃ অহং চ গমিষ্যাবঃ, ত্বম্ অহং চ গমিষ্যাবঃ, দেবদত্তঃ ত্বম্ অহং চ গমিষ্যামঃ।

(৭) যদি একই ক্রিয়ার কর্তা প্রথম ও মধ্যম পুরুষের হয়, সেক্ষেত্রে ক্রিয়াপদটি মধ্যম পুরুষের হয়, যথা-দেবদত্তঃ ত্বং চ গচ্ছতম্, দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ ত্বং চ গচ্ছত।

(৮) যদি একই ক্রিয়ার দুই বা দুই-র অধিক বিভিন্ন পুরুষের কর্তা 'বা'-এই অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে, তাহলে ক্রিয়ার অব্যবহিত পূর্বে যে কর্তৃপদ থাকে, তার পুরুষ ও বচন অনুসারে ক্রিয়ার পুরুষ ও বচন হয়। যথা-দেবদত্তঃ অহং বা গমিষ্যামি। স ত্বং বা গমিষ্যসি। তে বালকাঃ ইয়ং বালিকা বা গমিষ্যতি।

(৯) যখন বাক্যের মধ্যে 'বা' থাকে ও প্রত্যেকটি কর্তা একবচন হয়, তখন ক্রিয়াটিও একবচন হবে। যথা-দেবদত্তঃ যজ্ঞদত্তঃ সোমদত্তঃ বা গচ্ছতু।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ-
Helps to the Study of Sanskrit-জানকীনাথ শাস্ত্রী।
পাণিনীয়ম্-লাহিড়ী-শাস্ত্রী।
পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র-সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী-হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য

প্রশ্নপত্র(Question Paper): https://forms.gle/JHPnNisnwNKpJtgT7