Thursday, January 3, 2019

পাঠ- কর্মপ্রবচনীয়

কর্মপ্রবচনীয়বিষয়ক পাণিনির অধিকার সূত্রটি হল-"কর্মপ্রবচনীয়াঃ" (১-৪-৮৩)।  "বিভাষা কৃঞি" (১-৪-৯৮) পর্যন্ত এই সূত্রের অধিকার (অর্থাৎ এই সূত্রকে অবলম্বন করে পরবর্তী সূত্রগুলি প্রবৃত্ত হয়েছে)। টি, ঘু প্রভৃতির ন্যায় একাক্ষরবিশিষ্ট লঘুসংজ্ঞা না করে 'কর্মপ্রবচনীয়' -এরূপ মহাসংজ্ঞা করবার প্রয়োজন প্রসঙ্গে মহাভাষ্যকার পতঞ্জলি বলেছেন--"অন্বর্থসংজ্ঞা যথা বিজ্ঞায়েত" অর্থাৎ অন্বর্থের (ব্যুৎপত্তি লভ্য অর্থের) বোধন (অবগতি) যাতে হয়। কর্মপ্রবচনীয় শব্দে 'কর্ম (ক্রিয়াং) প্রোক্তবন্তঃ' -এই অর্থে "কৃত্যল্যুটোর্বহুলম্" (৩-৩-১১৩) সূত্রে অতীতকালে কর্ত্রর্থে অনীয়র্ প্রত্যয় হয়েছে। সুতরাং তাৎপর্য হল অতীত কালে ক্রিয়াকে প্রকাশ করত, কিন্তু বর্তমানে কোনো ক্রিয়াকে প্রকাশ করছে না। তবে সম্বন্ধের ভেদ অবশ্যই প্রকাশ করে। প্র, পরা প্রভৃতি ২০টি দ্যোতক অব্যয় (যার কোনো নিজস্ব অর্থ নেই, কোন শব্দ বা ধাতুর সাথে মিলিত হয়ে যা বিশেষ বিশেষ অর্থের দ্যোতনা করে, তা দ্যোতক অব্যয়) ক্রিয়ার সাথে যুক্ত হলে "উপসর্গাঃ ক্রিয়াযোগে" (১-৪-৫৯) এবং "গতিশ্চ" (১-৪-৬০) সূত্রানুসারে যথাক্রমে উপসর্গ অথবা গতি সংজ্ঞা প্রাপ্ত হয়। যে সকল প্র, পরা প্রভৃতি অব্যয় ধাতুর সঙ্গে ব্যবহৃত না হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষ্যকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদেরকে কর্মপ্রবচনীয় বলে। গতি ও উপসর্গ সংজ্ঞার বাধ করাই এই সংজ্ঞার উদ্দেশ্য।  ভর্তৃহরি তাঁর বাক্যপদীয় গ্রন্থে  কর্মপ্রবচনীয়ের স্বরূপ বলেছেন--

'ক্রিয়ায়া দ্যোতকো নায়ং সম্বন্ধস্য ন বাচকঃ।
নাপি ক্রিয়াপদাক্ষেপী সম্বন্ধস্য তু ভেদকঃ।।'

ক্রিয়ার দ্যোতক নয়, সম্বন্ধের বাচক নয় এবং কোনো ক্রিয়াপদকে আক্ষিপ্ত করে না অর্থাৎ টেনে আনে না, সম্বন্ধের ভেদক (বিশেষণ) মাত্র অর্থাৎ সম্বন্ধকে বিশেষিত করে। 
১).ক্রিয়ায়া দ্যোতকো নায়ং, যথা--'জপমনু প্রাবর্ষৎ'-এই বাক্যে 'অনু' অব্যয়ের কর্মপ্রবচনীয়সংজ্ঞা হয়েছে। এই 'অনু' শব্দের দ্বারা ক্রিয়া বিশেষের বোধ হয় না,যেমন -'সুখম্ অনুভূয়তে' (সুখ অনুভব করছে) এই স্থলে 'অনু' 'অনুভব'-এই ক্রিয়াবিশেষের দ্যোতনা করে।  
২).সম্বন্ধস্য ন বাচকঃ। যথা- 'জপমনু প্রাবর্ষৎ' -এই বাক্যে ষষ্ঠী বিভক্তির মত 'অনু' শব্দের দ্বারা সম্বন্ধ উক্ত হচ্ছে না, 'কর্মপ্রবচনীয়' সংজ্ঞা প্রযুক্ত দ্বিতীয়া বিভক্তির দ্বারাই তা হয়েছে।
৩).নাপি ক্রিয়াপদাক্ষেপী। 'প্রাদেশং বিপরিলিখতি' (প্রাদেশ=কুুশবিশেষ, বিপরিলিখতি=মেপে কাটছে)- ইত্যাদি বাক্যে যেমন 'বিমায় পরিলিখতি' -ইত্যাদি রূপে 'বি' শব্দের দ্বারা 'বিমান' ক্রিয়ার আক্ষেপ হয়, 'জপম্ অনু....' উদাহরণে ঐরূপ অন্য কোনো ক্রিয়া আক্ষিপ্ত হচ্ছে না। 'প্রাদেশং বিমায় পরিলিখতি'-এই বাক্যে যেমন আক্ষিপ্ত বিমান অর্থাৎ পরিমাপ ক্রিয়ার কর্মরূপে 'প্রাদেশ' পদে "কর্মণি দ্বিতীয়া" সূত্রে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়, সেইরূপ 'জপমনু প্রাবর্ষৎ' ইত্যাদি ক্ষেত্রেও যদি 'অনু'-র দ্বারা অন্য ক্রিয়া আক্ষিপ্ত হত, তাহলে সেই আক্ষিপ্ত ক্রিয়ার কর্মরূপে 'জপ' পদে কর্মে দ্বিতীয়া হত, কিন্তু তা হয় না। ৪).(সম্বন্ধস্য তু ভেদকঃ।) বরং 'অনু' 'জপসম্বন্ধী বর্ষণ' কে এখানে প্রকাশ করছে অর্থাৎ দ্বিতীয়া বিভক্তির দ্বারা কেবল সম্বন্ধত্বরূপে সম্বন্ধসামান্যের প্রতীতি হলে 'অনু' শব্দটি লক্ষ্যলক্ষণভাবরূপ সম্বন্ধবিশেষকে ('জপ' লক্ষণ এবং 'বর্ষা' লক্ষ্য) প্রকাশ করছে। সুতরাং 'অনু' অব্যয়টি সম্বন্ধবিশেষের প্রকাশকমাত্র।
                                     কর্মপ্রবচনীয় সাধারণতঃ বিভক্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সাধারণতঃ "কর্মপ্রবচনীয়যুক্তে দ্বিতীয়া" (২-৩-৮) সূত্রে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়। 'জপমনু প্রাবর্ষৎ'-উদাহরণে 'জপ' বর্ষণের হেতু এবং তাতে 'অনু'-যোগে দ্বিতীয়া হয়েছে। কোথাও কর্মপ্রবচনীয়যোগে পঞ্চমী (প্রাসঙ্গিক সূত্র-"পঞ্চম্যপাঙ্-পরিভিঃ"-(২-৩-১০) ও সপ্তমী (প্রাসঙ্গিক সূত্র-"যস্মাদধিকবচনং যস্য চেশ্বরবচনং তত্র সপ্তমী"-(২-৩-৯) হয়। যথাক্রমে উদাহরণ--আ মুক্তেঃ সংসারঃ,   হরিঃ সুরেষু অধি।



সহায়কগ্রন্থ--

অযোধ্যানাথ-সান্যাল -শাস্ত্রিসম্পাদিতা বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী (কারকপ্রকরণম্)।

বিশ্বরূপসাহাসম্পাদিত কারকপ্রকরণ।

লাহিড়ী-শাস্ত্রিসম্পাদিত পাণিনীয়ম্।