Friday, August 21, 2020

পাঠ- ১: দ্বন্দ্বসমাস

দ্বন্দ্ব সমাসের প্রধান সূত্র হল-"চার্থে দ্বন্দ্বঃ।" 'চ'-এর অর্থে বিদ্যমান একাধিক সুবন্ত পদের বিকল্পে সমাস হয় এবং তা দ্বন্দ্ব। সূত্রস্থ 'চ'-এর অর্থ চারটি- সমুচ্চয়, অন্বাচয়, ইতরেতরযোগ এবং সমাহার-'সমুচ্চয়ান্বাচয়েতরেতরযোগসমাহারাশ্চার্থাঃ।'

(ক) সমুচ্চয়- পরস্পর নিরপেক্ষ একাধিক সুবন্ত পদের একবিষয়ক অন্বয়কে সমুচ্চয় বলা হয়-'পরস্পরনিরপেক্ষস্য অনেকস্য একস্মিন্নন্বয়ঃ সমুচ্চয়ঃ।' এই সমুচ্চয় আবার চার প্রকার-

অ) ক্রিয়ার সঙ্গে দ্রব্যের- ঈশ্বরং গুরুঞ্চ ভজস্ব।
আ) দ্রব্যের সঙ্গে দ্রব্যের- রাজ্ঞঃ গজশ্চ অশ্বশ্চ।
ই) দ্রব্যের সঙ্গে গুণের - পটঃ শুক্লঃ রক্তশ্চ।
ঈ) গুণের সঙ্গে দ্রব্যের- রক্তঃ পটঃ কম্বলশ্চ।

খ) অন্বাচয়- প্রধান বিষয়ের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়ের যে একাত্ম সূচক অন্বয়, তাকে অন্বাচয় বলে-'অন্যতরস্য আনুষঙ্গিকত্বে অন্বাচয়ঃ।' যথা- 'ভিক্ষাম্ অট গাং চ আনয়' অর্থাৎ ভিক্ষায় যাও, পথে  গুরুটি দেখতে পেলে আন।

গ)  ইতরেতরযোগ- পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক সুবন্ত পদ একই ক্রিয়ার সঙ্গে যুগপৎ অন্বিত হলে এবং প্রত্যেক পদে পৃথক্ প্রাধান্য থাকলে ইতরেতর যোগ হয়। 'মিলিতানামন্বয়ে ইতরেতরযোগঃ।' যথা-রামশ্চ লক্ষ্মণশ্চ গচ্ছতি।

ঘ) সমাহার- সমস্যমান পদগুলি পরস্পর সাহিত্য বোঝালে তাদের সমূহ কে সমাহার বলে। 'সমূহঃ সমাহারঃ।' যথা-অহয়শ্চ নকুলাশ্চ-অহিনকুলম্। সূত্র-"যেষাঞ্চ বিরোধঃ শাশ্বতিকঃ।"

  • এদের মধ্যে কোন্ কোন্ অংশ সমাসে প্রযুক্ত হয় এবং কেন?

এই চারটি চার্থের মধ্যে সমুচ্চয় ও অন্বাচয় অর্থ সমাসের উপযোগী নয়। 'ঈশ্বরং গুরুঞ্চ ভজস্ব'-এই বাক্যে একটি মাত্র 'চ'-শব্দ থাকায় 'ঈশ্বরং ভজস্ব' বললে 'গুরুঞ্চ'-এই অংশের জন্য আর আকাঙ্ক্ষা থাকে না বলে অসামর্থ্যহেতু ঈশ্বর ও গুরু শব্দের সমাস হল না।

অপরদিকে, একটি অপরটির আনুষঙ্গিক হলেও উভয়-ই দেবদত্তের সঙ্গে অন্বিত, কিন্তু  'ভিক্ষাম্ অট' বলবার পর অবশিষ্ট অংশের জন্য 'গাং চ আনয়' আর কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে না বলে, এখানেও সমাস হতে পারে না। কিন্তু ইতরেতর এবং সমাহারে পরস্পর সাহিত্যরূপ সম্বন্ধ থাকায় সমাস হয়, আর সমুচ্চয় ও অন্বাচয়ে এরূপ কোনো সম্বন্ধ থাকে না বলে ঐ দুটি চার্থে সমাস হয় না। সেজন্য 'প্রয়োগরত্নমালা'য় সূত্রিত হয়েছে-'সমুচ্চয়ান্বাচয়য়োর্দ্বন্দ্বো নাস্তি।' 



  • ইতরেতর-যোগদ্বন্দ্ব ও সমাহারদ্বন্দ্বের মধ্যে পার্থক্যঃ-

১. ইতরেতর যোগে মিলিতের অন্বয় হয়। আর সমাহারে সমূহ অর্থ প্রকাশিত হয়। ফলে ইতরেতর-যোগদ্বন্দ্বসমাসে সমাসবদ্ধ পদ হয় দ্বিবচনান্ত নতুবা বহুবচনান্ত, কিন্তু সাহিত্য বোঝালে সমাহার নিত্য ক্লীবলিঙ্গ এবং একবচন হয়ে থাকে। দ্বন্দ্ব সমাসে উক্ত দ্বিবিধ ভেদ স্বীকার করে 'শব্দশক্তিপ্রকাশিকা'য় জগদীশ বলেছেন-

'দ্বৌ ভেদাবস্য শাস্ত্রোক্তৌ সমাহারেতরেতরৌ।

একান্যবচনাকাঙ্ক্ষাহীনোপাদানতশ্চ তৌ।।' 

সমাহার ও ইতরেতর ভেদ নিয়ে ভর্তৃহরি তাঁর বাক্যপদীয় গ্রন্থেে বলেছেন-

'ইতরেতরযোগস্তু ভিন্নসঙ্ঘাভিধায়িনাম্।

প্রত্যেকঞ্চ সমূহোসৌ সমূহিষু সমাপ্যতে।।' (3-14-30)

২. ইতরেতর যোগদ্বন্দ্ব সমাসে পরপদের লিঙ্গ অনুসারে সমাসবদ্ধ পদের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। "পরবল্লিঙ্গং দ্বন্দ্বতৎপুরুষয়োঃ।"

কিন্তু সমাহার দ্বন্দ্ব সমাসে সমাসবদ্ধ পদ সর্বদা ক্লীবলিঙ্গ হয়। সূত্র-"স নপুংসকম্।"

৩. ইতরেতর যোগদ্বন্দ্ব বিকল্পে সমাহার দ্বন্দ্ব হয়ে যায়-'সর্বো দ্বন্দ্বো বিভাষয়ৈকবদ্ ভবতি।' যথা-বধূশ্চ বরশ্চ-'বধূবরৌ', আবার 'বধূবরম্' ও হয়ে থাকে।



সহায়ক গ্রন্থসমূহ--
ডঃসত্যনারায়ণ চক্রবর্তী প্রণীত পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র।
ডঃবিশ্বরঞ্জনবেদব্যাকরণতীর্থ-সম্পাদিত বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী।
ডঃসচ্চিদানন্দমুখোপাধ্যায়-সম্পাদিত বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী (সমাসপ্রকরণ)।
লাহিড়ী-শাস্ত্রি-সম্পাদিত পাণিনীয়ম্।


________________





1 comment: