Friday, August 28, 2020

পাঠ- অব্যয়ীভাবসমাস

'অবিদ্যমানো ব্যয়ো যস্য তদি'তি অব্যয়ম্ (নঞ্ বহুব্রীহিসমাস)। সূত্র- "নঞোস্ত্যর্থানাং বাচ্যো বা চোত্তরপদলোপঃ।"  'অনব্যয়ম্ অব্যয়ং ভবতি'-এরূপ অর্থে 'অব্যয়' শব্দের উত্তর "ঊর্যাদিচ্বিডাচশ্চ" সূত্রানুসারে অভূততদ্ভাবে 'চ্বি' প্রত্যয়ে এবং ভূ-ধাতুর উত্তর ঘঞ্ প্রত্যয় করে অব্যয়ীভাব পদটি নিষ্পন্ন হয়। অব্যয়ীভাব নামকরণের ক্ষেত্রে অব্যয়ের স্বরূপই প্রকটিত হয়েছে। যে পদ লিঙ্গ, বিভক্তি, বচন ব্যয় করে না তাকে অব্যয়ীভাব বলে। অব্যয়ীভাব সমাস নিষ্পন্ন পদ একই বিভক্তি ও একই বচনে স্থির থাকে, এদের কোনো পরিবর্তন হয় না।

অব্যয়ীভাবসমাসের বৈশিষ্ট্য :

পূর্বাচার্যগণ পদার্থের প্রাধান্যের ভিত্তিতে সমাসের চতুর্বিধত্ব স্বীকার করেছেন। তন্মধ্যে যে সমাসের পূর্বপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। 'পূর্বপদার্থপ্রধানোব্যয়ীভাবঃ।' এই সমাসের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
(ক) অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদ প্রধানতঃ অব্যয় থাকে। যেমন-মক্ষিকাণাম্ অভাবঃ - নির্মক্ষিকম্। এখানে অভাব অর্থদ্যোতক 'নির্' অব্যয়ের অর্থ-ই প্রধান।

(খ) কোন কোন ক্ষেত্রে অব্যয়ীভাব সমাসে উত্তরপদের অর্থও প্রধান হয়, যেমন-শাকস্য লেশঃ-শাকপ্রতি। "সুপ্ প্রতিনা মাত্রার্থে" সূত্রানুসারে এখানে 'প্রতি' অব্যয়টি মাত্রা বা স্বল্পার্থদ্যোতক, অথচ এটি পূর্বপদে না বসে উত্তরপদে বসেছে। এটি অব্যয়ীভাবসমাসের একটি ব্যতিক্রমী স্থল।

(গ) এই সমাসের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল পূর্বপদের অর্থ প্রধান না হয়ে অন্য পদের অর্থও প্রধান হয়। চরিত্রটি বহুব্রীহিসমাসের অনুরূপ। যথা-উন্মত্তগঙ্গম্, লোহিতগঙ্গম্। সূত্র- "অন্যপদার্থে চ সংজ্ঞায়াম্।" দীক্ষিত এই ক্ষেত্রটিকে অবিগ্রহ নিত্যসমাস বলেছেন--'বিভাষাধিকারেপি বাক্যেন সংজ্ঞানবগমাদিহ নিত্যসমাসঃ।'
 
(ঘ) "বিভাষা" এই সূত্রটি অব্যয়ীভাবসমাসের বৈশিষ্ট্যকে দ্বিধামণ্ডিত করেছে। "বিভাষা" সূত্রের পূর্ববর্তী অব্যয়ীভাবসমাসগুলি নিত্য, কিন্তু পরবর্তী সমাসগুলি অনিত্য অর্থাৎ বৈকল্পিক। নিত্যের ক্ষেত্রে সমাস অবশ্য কর্তব্য, যেমন-হরৌ-অধিহরি এটি বিভক্তির উদাহরণ। বৈকল্পিক বা অনিত্য সমাসের উদাহরণ-আমুক্তি। বিগ্রহ- আ  মুক্তেঃ। এখানে সমাস না করলেও অর্থবোধের অসুবিধা হয় না।

(ঙ) অব্যয়ীভাবসমাসে অকারান্ত শব্দের উত্তর অম্ভাব হয়। সূত্র- "নাব্যয়ীভাবাদতোম্ত্বপঞ্চম্যাঃ।"  যথা-দুর্ভিক্ষম্, অনুরূপম্ ইত্যাদি।

(চ) এই সমাসে কিছু কিছু পদ নিপাতনে সিদ্ধ হয়। যেমন-'তিষ্ঠন্তি গাবো যস্মিন্ কালে (দোহায়) সঃ'-তিষ্ঠদ্গু। সূত্র-"তিষ্ঠদ্গুপ্রভৃতীনি চ।"

(ছ) অব্যয়ীভাবসমাসের অপর বৈশিষ্ট্য  হল যে, অব্যয়ীভাবসমাস নিষ্পন্ন পদ সর্বদা অব্যয় হয়। সূত্র- "অব্যয়ীভাবশ্চ।"


সহায়কগ্রন্থসূচী :
ডঃবিশ্বরঞ্জনবেদব্যাকরণতীর্থ-সম্পাদিত বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী।
ডঃসচ্চিদানন্দমুখোপাধ্যায়-সম্পাদিত বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী (সমাসপ্রকরণ)।
লাহিড়ী-শাস্ত্রি-সম্পাদিত পাণিনীয়ম্।

6 comments:

  1. সহজ সরল খুব সুন্দর আলোচনা দাদা।খুব ভালো লাগল

    ReplyDelete
  2. অত্যন্তং সরলরূপেণোপস্থাপিতঃ‌ সমাসঃ

    ReplyDelete
  3. সুন্দরভাবে সহজভাবে লিখেছেন।

    ReplyDelete
  4. এগিয়ে যান স্যার।

    ReplyDelete