Saturday, April 4, 2020

পাঠ- উপপদতৎপুরুষসমাস

উপপদতৎপুরুষবিষয়ক ভগবান্ পাণিনির বিশেষ সূত্রটি হল- "উপপদমতিঙ্"(২-২-১৯)। সূত্রে 'উপপদম্' 'অতিঙ্' -এই দুটি পদ আছে। 'উপপদম্' শব্দটি 'পদস্য সমীপম্'- এই বিগ্রহে "অব্যয়ং বিঙক্তি....." (২-১-৬) এই সূত্রানুসারে অব্যয়ীভাবসমাসনিষ্পন্ন প্রথমান্ত। 'অতিঙ্' শব্দটি 'ন তিঙ্'-এই বিগ্রহে "নঞ্" (২-২-৬) এই সূত্রানুসারে নঞ্তৎপুরুষসমাসনিষ্পন্ন প্রথমান্ত। "সমর্থঃ পদবিধিঃ"(২-১-১)- এই পরিভাষা সূত্র থেকে 'সমর্থ' পদটি আলোচ্য সূত্রে অনুবৃত্ত হয়। দীক্ষিত বৃত্তিতে বলেছেন-"উপপদং সুবন্তং সমর্থেন নিত্যং সমস্যতে, অতিঙন্তশ্চায়ং সমাসঃ।" অর্থাৎ সুবন্ত উপপদের সমর্থ পদের সহিত নিত্য সমাস হয়। পরন্তু এই সমাস তিঙন্তের সহিত হয় না। উদাহরণ যথা-'কুম্ভং করোতি' -এই তাৎপর্যবোধকবাক্যে কৃদন্ত 'কার' এই প্রাতিপদিকের সহিত 'কুম্ভ' এই উপপদের সমাসে 'কুম্ভকার' শব্দ নিষ্পন্ন হয়।  উপপদ কী? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়- উপপদবিষয়ক পাণিনির সূত্রটি হল-"তত্রোপপদং সপ্তমীস্থম্"(৩-১-৯২)। এই সূত্রের বৃত্তিতে ভট্টোজিদীক্ষিত বলেছেন- "সপ্তম্যন্তে পদে কর্মণি ইত্যাদৌ (৩-২-১) বাচ্যত্বেন স্থিতং কুম্ভাদি। তদ্বাচকং পদমুপপদসংজ্ঞং স্যাৎ। তস্মিংশ্চ সত্যেব বক্ষ্যমাণঃ প্রত্যয়ঃ স্যাৎ।"  অর্থাৎ ধাতুপ্রত্যয়প্রকরণে ("ধাতোঃ" ৩-১-৯১, ধাত্বধিকারে) অথবা ধাতুপ্রত্যয়বিধায়কসূত্রে সপ্তমীনির্দিষ্ট পদকে উপপদ বলে। যথা "কর্মণ্যণ্" (৩-২-১) সূত্রে সপ্তম্যন্ত 'কর্মণি' পদদ্বারা 'কুম্ভং করোতি' উদাহরণে কর্মকারক 'কুম্ভম্' সূচিত হয়,অতএব 'কুম্ভং করোতি' -এই বাক্যে 'কুম্ভম্' উপপদ। এই 'উপপদ' পূর্বে যুক্ত না হইলে অণ্ প্রত্যয় হয় না।

"উপপদমতিঙ্"(২-২-১৯) সূত্রে 'অতিঙ্' গ্রহণদ্বারা তিঙন্তের সহিত উপপদের সমাস নিষিদ্ধ হয়েছে।  সুতরাং 'মা ভবান্ ভূৎ' এই বাক্যে 'মাঙ্'-এর তিঙন্ত 'ভূৎ' পদের সহিত সমাস হয় নি। উক্তস্থলে "মাঙি লুঙ্" (৩-৩-১৭৫) সূত্রে 'মাঙি' সপ্তম্যন্তপদস্থ হওয়ায় "তত্রোপপদং সপ্তমীস্থম্" (৩-১-৯২) সূত্র দ্বারা 'মা'-এর উপপদসংজ্ঞা হয়। সেই সুবন্ত উপপদের 'মা'-এর তিঙন্তপদ 'ভূৎ' ইহার সহিত সমাস হয় না। সূত্রে 'অতিঙ্' না বলা থাকিলে 'মা'-এর তিঙন্ত 'ভূৎ' ইহার সহিত সমাস হইয়া অনিষ্টরূপ সিদ্ধ হইত। এছাড়াও 'অতিঙ্' গ্রহণ দ্বারা জ্ঞাপিত হয় যে , "সহ সুপা" (২-১-৪) সূত্র হইতে 'সুপা' পদটিও এই সূত্রে অনুবৃত্ত হইবে না। ফলতঃ সুবন্তের সহিতও উপপদের সমাস নিষিদ্ধ। সুবন্তের সহিত সমাস নিষেধের জন্যই সূত্রে 'অতিঙ্' পদ গৃহীত হইয়াছে।  অতএব সিদ্ধান্ত হইল যে, সুবন্ত উপপদের তিঙন্ত ও সুবন্ত ভিন্ন সমর্থের সহিত সমাস হয়।

এখন প্রশ্ন হল, তবে কাহার সহিত উপপদতৎপুরুষসমাস বিধেয়? এতদুত্তরে ভট্টোজিদীক্ষিত বলেছেন--"গতিকারকোপপদানাং কৃদ্ভিঃ সহ সমাসবচনং প্রাক্ সুব্যুৎপত্তেঃ।"  অর্থাৎ গতিতৎপুুরুষ, কারক এবং উপপদের কৃদন্তের (প্রাতিপদিকের) সহিত সমাস সুপ্ বিভক্তি আসিবার পূর্বেই নিষ্পন্ন হয়। সুতরাং উপপদতৎপুরুষসমাসটি সমর্থ উপপদ এবং কৃদন্ত প্রাতিপদিকের সহিত গঠিত হয়। যথা, 'কুম্ভং করোতি যঃ সঃ'- এই বাক্যে "কর্মণ্যণ্" এই সূত্র বলে কর্মকারকস্থ 'কুম্ভ' উপপদে কৃ-ধাতুর উত্তর অণ্ হওয়ায় 'কুম্ভ অস্ কার' ('কারঃ' নয়)-এইরূপ অলৌকিক বিগ্রহবাক্যে 'কুম্ভকার' এইরূপ উপপদ সমাস এবং পরে বিভক্তিযোগে 'কুম্ভকারঃ' হয়।



সহায়ক গ্রন্থসমূহ--
ডঃবিশ্বরঞ্জনবেদব্যাকরণতীর্থ-সম্পাদিত বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী।
ডঃসচ্চিদানন্দমুখোপাধ্যায়-সম্পাদিত বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী (সমাসপ্রকরণ)।
লাহিড়ী-শাস্ত্রি-সম্পাদিত পাণিনীয়ম্।

No comments:

Post a Comment